ইথিওপিয়ার তিন কবিতা

প্রোফেসর প্রণব ভট্টাচার্য

 

বেউকেটু সেওউম — ইথিওপিয়ার নতুন প্রজন্মের এক যুবা কবি ও লেখক।উত্তর-পশ্চিম আদ্দিসাবাবার অধিবাসী।বাবা ইংরাজীর অধ্যাপক,মা খ্রীস্টসম্প্রদায়ের এক পুরোহিতের মেয়ে। ছোটগল্প, উপন্যাস ও কবিতার সর্বসাকুল্যে আটখানি বই প্রকাশিত.২০০৮ সালে রাস্ত্রপতি দ্বারা “বছরের শ্রেষ্ঠ যুবা লেখকের” সম্মানে ভূষিত হন ও ২০১২ তে লন্ডনে অনুষ্ঠিত “পোয়োট্র পারনাস” উৎসবে ইথিওপিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন।
১) স্বাধীনতার দরজায়

 যদি কখনও ঐ অত্যাচারিত প্রেতাত্মারা
এতদিন শেকলের বন্ধনে যারা বেঁচে ছিল
আজ যদি হঠাৎই তারা স্বাধীনতার ডাক দেয়—
ওদের জেল ঘরের দরজাগুলো খুলে দিলেও
আর রক্ষীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেও
ওরা কিন্তু সত্যিকারের স্বাধীনতা পাবেনা
যতক্ষণ না পর্যন্ত
জেলঘরের সমস্ত দেওয়াল
ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়।

২) নিষিদ্ধ
ধুমপান নিষিদ্ধ
শিস দেওয়া নিষিদ্ধ
মদ্যপান নিষিদ্ধ
প্রেম করাও নিষিদ্ধ।
পুরো দেশটাই নিষিদ্ধের
মোড়কে আবদ্ধ।
এখানে কোনটা বেঠিক
বোঝার উপায় নেই।
আমি কী ভাগ্যবশে একটা
দেওয়াল পেতে পারি।
আর একটু লেখার শক্তি?
সেখানে আমার স্লোগান
হবে “নিষিদ্ধ এই দেশে
মানবতাই নিষিদ্ধ”।

৩) আমার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে

জানো !
আমার একটা ছোট্ট বাসা আছে
কিন্তু কোন বাড়ী নেই,
আমার একটা জমি আছে
কিন্তু কোন জন নেই, ঠিকানা নেই,
আমার নিজস্ব কোন দেশ নেই
কোন নাগরিত্বও নেই
আমি এথার বস্তুসম এক শরীর মাত্র
আমি আমার মাতৃভূমিতে
এক অজানা, অচেনা, অযাচিত
অস্তিত্বহীন এক আগন্তুক মাত্র।
—————

লিউ লিবসেকল — জন্ম ১৯৯০।ইথিওপিয়ায়।পারিবারিক সুত্রে বাল্যকাল কেটেছে পূর্ব-আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে.২০১২তে জৈব-বিজ্ঞানে স্নাতক হন জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।স্নাতকোত্তর অধ্যায়ে তার প্রধান পাঠ্য ছিল আন্তর্জাতিক উন্নয়নকল্প। দেশে ফিরে আসার আগে বেশ কিছু বছর ভিয়েতনামে কাটান। ২০১৩ তে ‘ইথিওপিয়ান বিজনেস রিভিউ’ তে বর্তমান ইথিওপিয়ার পরিস্থিতি ও সংস্কৃতির ওপর লেখা তার একটি জ্ঞানগর্ভ রচনা জনমানসে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়। ২০১৪ তে ব্রত্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে শ্রেষ্ঠ ‘আফ্রিকান পোয়েত্রি’ পুরষ্কারে সম্মানিত করে।

১) ছেলেবেলায় ময়লাহাতে মাটিখেলা

যে মহিলাটি আমার জন্মদাত্রী
কী অপূর্ব মহিমায় তার দুহাত
সাবলীল ভঙ্গীমায়, নীরবে
কাজ করে চলতও, অবাক আমি
মনে হতো সবই যেন নিছক ছকবাঁধা।
আমি মনে করি
জাদুসম নিঁখুত কাজগুলো
তার বয়সের অভিজ্ঞতা।
মাটির ভেতরের কেঁচোগুলো একে একে
নিত্য প্রজননক্রিয়া সেরে
বিনাদ্বিধায় নিজেদের সিক্ত করে,
লাল মাটি আর পরিত্যক্ত পাইপের
আনাচে-কানাচে, আমার অস্থির
হাতযুগল বেমালুম ঘুরে বেড়াতো
কী জানি কীসের খোঁজে ?

২) বোকার প্রেম

আমার কাছে
সে এক সামান্য নারী নয়
তার সমস্ত শরীর ঘিরে
আকাশের তারাদের আস্তানা
পৃথিবী তার অন্তরাত্মা
যদি সারাটা জীবন ধরে
পালিয়ে বেড়াতে চায়
তবুও সে বেশিদুর যেতে পারবে না
ধরা পড়বেই একদিন।

৩) আমি পাহাড়ে চড়বো না

আমি পাহাড়ে চড়বো না
নিত্য ভাসমান মেঘেদের ছুঁতে,
আমি ঐ সদাহাস্যময় রামধনুকেও
বিচলিত করতে এগিয়ে যাবনা ।
যখন আমি সত্যিই চড়তে চাইবো
তখন ‘টেক্লে হ্যামানট’-এর ডানায়ে চড়ে
অথবা ‘জেকব’-এর সিঁড়ির দাক্ষিন্যে
পাহারে চড়বো না,
আকাশ নিজেই স্বইচ্ছায়
আমার কাছে নেমে আসবে।

—- অনুবাদ – প্রোঃ
নেকেমটে, ইথিওপিয়া (আফ্রিকা)

Source: Internet

One Response

  1. Chandan Kumar Chaudhuri September 27, 2017

Leave a Reply