পিয়ালী চক্রবর্ত্তী
ভণ্ডুল ঘুমোনোর চেষ্টা করছিল। বাইরে ঝা ঝা গরম, রবিবারের দুপুর আজ। কত প্ল্যান ছিল, ইকো পার্ক যাবে, সারাদিন হৈহৈ। কিন্তু এতো গরম পরে গেলো কাল থেকে, সব বন্ধুর বাবা মায়েরা বলেছে, এখন যাওয়া হবে না, গরম কমলে যাবে সবাই। তো কি করবে এখন ঘরে বসে থেকে? কিচ্ছু ভালো লাগছে না। দশ বছর বয়স হয়ে গেলো, এখন আগের মতো কার্টুন ভালো লাগেনা, বাবার মোবাইল গেমগুলো সব পচা, খেলে খেলে বিরক্ত হয়ে গেছে। মায়ের মোবাইলে তো হাত দেওয়াও যাবে না। মাতো নিজেই হাতছাড়া করেনা সারাদিন। কি গম্ভীর মুখে কিসব যে মাথা নিচু করে করতে থাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যে অফিস, বাড়িতে এসে ভণ্ডুলকে হোমটাস্ক করতে দিয়েই মোবাইল। আর বাবাতো কি কাজ করে কে জানে, বাড়িতে ঢুকতেই আবার ফোন এসে যায়, রাত বারোটা অব্দি ফোনে ফোনে কাজ করে। মা বাবা ওকে নিয়ে তো একটুও ভাবেতো না-ই, উল্টে একটা বাজে ডাকনাম রেখে দিয়েছে, ভণ্ডুল। সব বন্ধুরা ওকে খ্যাপায় এই নিয়ে। ওদের বাড়ির পাশে থাকে তীর্থ, ওর স্কুলে পড়ে, ও গিয়ে সবাইকে বলে দিয়েছে। সেই থেকে ভণ্ডুল ভণ্ডুল করে অস্থির করে তোলে সবাই। আজও তীর্থ ছাদ থেকে আওয়াজ দিলো, ‘কিরে আজ ইকোপার্ক ভণ্ডুল?’
– কি ভন্ডুলবাবু ঘুম পাচ্ছে না?
বাবা প্রশ্ন করলো পাশে বসে, রাগ হয়ে গেলো ভন্ডুলের
– না পাচ্ছে না, আমার নাম চেঞ্জ করে দাও, ভণ্ডুল একটা বাজে নাম
– ইস কত ইউনিক, আর কারুর এমন নাম আছে?
– নামটা বিচ্ছিরি
মা মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে বললো
– জানতাম আমি, বলেছিলাম ওইসব ন্যাকা ন্যাকা নাম রেখো না, বড় হলে বিরক্তিকর হবে
আরও রাগ হয়ে গেলো ভন্ডুলের, মা কম যায়? সে চিৎকার করে বললো
– তুমি যেন খুব ভালো নাম রেখেছো? এত্তবড় একটা স্কুলের নাম ঋদ্ধিপ্রতিম মুখোপাধ্যায়
– স্টপ ইট নৈঋত (এটা মায়ের দেওয়া ভন্ডুলের ডাকনাম), লার্ন স্যাম ম্যানার্স, ইউ আর গোয়িং টু এ গুড স্কুল এন্ড নিট রেজাল্ট ইস জিরো
ব্যাস, মা রেগে গেছে মানেই ইংরেজি বলেই যাবে, এবার বাবা আরো জোরে চেঁচাতে শুরু করলো
– তুমি এমন রেগে যাচ্ছ কেন? ও তো ওর সমস্যার কথা বলছে, একটা ছুটির দিন আমাদের ও পায়, আজ সকাল থেকে তুমি মাথা গরম করে আছো
– কেন মাথা গরম করবো না? সৌম্য আর যূথিকা কেন এখনো তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে বলতো? ওরা আমাদের সাথে এতো বাজে ব্যবহার করলো, তা সত্ত্বেও তুমি ওদের সাথে যোগাযোগ রাখো, কাল আবার ঢং করে বিবাহবার্ষিকীর উইশ করছিলে
বাবা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো, বড় বড় চোখ করে বললো
– আর ইউ ক্রেজি? মানে এই নিয়ে তুমি ঝামেলা করবে?
– কেন করবো না ? …….
ব্যস, শুরু হয়ে গেছে ফেসবুকীয় ঝগড়া, ভণ্ডুল ঘুমোলো কি ঘুমোলো না, কেউ দেখছে না। উত্তম সময়, ভণ্ডুল টুক করে কেটে পড়লো ঘর থেকে। খাবার জায়গা পেরিয়ে ঠাম্মির ঘরে চুপটি করে ঢুকে, অন্য দরজা দিয়ে ঠাম্মির ঘর লাগোয়া বারান্দায় এলো ভণ্ডুল। খুব কড়া রোদ পড়েছে বারান্দায়, পা রাখা যাচ্ছে না, এতো তেতে আছে। তবুও এদিক ওদিক তাকিয়ে, এক কোণায় রাখা মাদুরটা নিয়ে ভাঁজ করা অবস্থাতেই মেঝেতে রেখে তার ওপর চড়ে বসলো ভণ্ডুল। হাত দুটো দিয়ে মাদুরের দুপ্রান্ত ধরে বেশ একটা উড়ে চলেছে এমন করতে লাগলো, উ উ শব্দ করে মুখে। এইসময় নিজেকে হ্যারি পটার মনে হয় ভন্ডুলের। বেশ ঝাঁটা চেপে উড়ে চলেছে ইচ্ছেমতো। এই যেমন এখন ইকো পার্ক যাচ্ছে। তীর্থদের ছাদের ওপর উড়ে যেতে যেতে মুখ ভেংচে দিলো ভণ্ডুল। তারপরেই সামনে তাকাতে গিয়ে দেখে একটা রকেট আসছে মুখোমুখি, উফ কি করে কাটাবে একে? ডানদিক, বামদিক হেলছে, মুখে আরো জোরে জোরে শব্দ করছে, উউউউ, এই কাটালো বলে, ব্যস ঘর থেকে বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে ঠাম্মি।
– এই ভর দুপুরে রোদের মধ্যে তুই মাদুর চেপে কি করছিস?
– হ্যারি পটার খেলছি
– শুবি না? মা বাবা ঘুমিয়েছে?
– জানি না, আমি ঘুমোবো না
– আচ্ছা তাহলে আমার কাছে আয়
– না যাবো না, তুমি তো ঘুমোবে
– না ঘুমোবো না, তোকে গল্প শোনাবো
– প্লিজ ওই রাজা-রানী, ভূতের গল্প ভালো লাগে না
– আয় না আজ একটা অন্য গল্প বলবো
ঠাম্মির পাশে উপুড় হয়ে শুয়ে গল্প শোনা শুরু করলো ভণ্ডুল। ঠাম্মি বেশ গুছিয়ে গল্প বলতে পারে।
সেই সেকেলে কলকাতায় যখন ট্রাম, বাস ছিল না, ছিল পালকি আর শ্যাকড়াগাড়ি, তখনকার একটা বাচ্চা ছেলের গল্প।
ভণ্ডুল সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলো
– কে রবীন্দ্রনাথ?
ঠাম্মি বিরক্ত হয়ে বললো
– কেন রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কোনো ছেলে তখন জন্মায়নি? শোন না
তো সেই ছেলেটা এক বিশাল বাড়িতে অনেক ভাইবোনের মধ্যে বড় হতে লাগলো। তখনকার সমাজ তো এখনকার মতো এতো খোলামেলা ছিল না, মেয়েরা থাকতো অন্দরমহলে।
– সেটা কি ?
– মানে ভিতর বাড়িতে। বাইরে যে বসবার ঘর, কাছারি ছিল, সেখানে আসতো বাইরের মানুষজন। তাদের সামনে মেয়েদের আসতে মানা ছিল। তাই মেয়েরা ভিতরে থাকতো, রান্না করতো, বাড়ির কাজ করতো, আর রাশি রাশি পান সাজতো অতিথিদের জন্য। বাড়ির পুরুষেরা ব্যবসা সামলাতো, আর বাচ্চারা মানুষ হতো চাকর-বাকরদের কাছে। মোটা মোটা গোঁফওয়ালা, মুগুর ভাঁজা, কুস্তিগীর পালোয়ানরা সব দরজায় পাহারা থাকতো। তাদের হাতে থাকতো পিতলে বাঁধানো লাঠি। তাদের কাজ ছিল, বাড়ি আগলানো, ব্যাংকে টাকা রেখে আসা, আর বাড়ির মেয়েদের কুটুমবাড়ি পৌঁছে দেওয়া। এমনকি বড় বাড়ির বৌদের, যাদের বাইরে মুখ দেখানো একেবারেই বারণ ছিল, তারা গঙ্গাস্নানে যেতে চাইলে, তাদের পালকির মধ্যে বন্ধ করে, সহিসরা পালকি কাঁধে যেত, আর পাশে পাশে যেত এইসব দারোয়ানরা। আর তারপর গঙ্গায় পালকি ডুবিয়ে দিয়ে স্নান করিয়ে নিয়ে আসতো।
– গঙ্গায় পালকি ডুবিয়ে দিতো?
– হ্যাঁ, নইলে স্নান করতে হলে তো বাইরে বেরিয়ে জলে নামতে হতো
– রবীন্দ্রনাথের মাকে এমনভাবে স্নান করিয়ে আনতো?
– আবার রবীন্দ্রনাথ!! আমি তো এমনি একটা গল্প বলছি। যাইহোক এইসব দারোয়ানদের কুস্তির প্যাঁচ, গোটা শরীরে তেল মাখা, গোঁফে মোচড় দেওয়া, আবার ‘রাধাকৃষ্ণের’ ভজনা, কাঁচা শাক, মূলো খাওয়া, সিদ্ধি মাখা এইসব দেখেই সেই ছেলেটা অবাক হয়ে যেত। সেও লাগাতো কুস্তির প্যাঁচ। এই যেমন তোদের ব্যাটম্যান, সুপারম্যান হিরো, ছেলেটার প্রথম হিরো ছিল এই দারোয়ানরা।
তারপর নামতো সন্ধ্যে। তখন তো আর ইলেকট্রিক ছিল না ঘরে ঘরে, জ্বলতো রেড়ির তেলের আলো। সন্ধ্যে হতেই বাকিসব দাদাদের সাথে সেই ছেলেটাও পড়তে বসত। দুই সলতের একটা সেজ জ্বালিয়ে পড়াশুনা
– সেটা কি?
– ওটা হলো সেজবাতি। তা এই ছেলেটার পড়াশুনায় মন বসত না একদম।ওই নিয়ম মেনে পড়া ভালো লাগতো না। তাকে বলা হতো কত ছেলেরা মন দিয়ে পড়াশুনা করে, তাকেও করতে হবে। কিন্তু কোনোকিছুতেই তার ওই নিয়ম করে পড়তে বসার ইচ্ছে জাগত না। কোনোক্রমে চোখ বুলিয়ে ঘুমে ঢুলে পড়ত ন’টা বাজতে না বাজতেই। ব্যস, অমনি মিলতো ছুটি. তখন অন্দরমহলে যেত গুটি গুটি পায়ে। চারিদিকে ঘুটঘুটি অন্ধকার, চাকররা গল্প বলেছে, এইসময় নাকি ভূতে এসে ধরে বাচ্চাদের। শাকচুন্নি নাকি খিনখিনে গলায় হাসে, আর মাছ চুরি করতে আসে। আর তাদের বাড়ির কোণে যে বাদামগাছটা আছে, তার উপর এক পা আর তেতলার ছাদের কার্নিশে একপা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে একটা ব্রম্ভদত্যি। ওরে বাবারে, সেতো মারতো এক দৌড়।
ভণ্ডুল একটু ঘন হয়ে শুলো ঠাম্মির কাছে. ফিসফিস করে বললো “আমারও ভয় করে জানো, রাতে শুলে আমি মাথার ওপরের জানলার দিকে তাকিয়ে থাকি, মনে হয় কে যেন দাঁড়িয়ে আছে”।
– তাইতো ছেলেমানুষদের ভয় করবে না তা কি হয়? তারপর ছিল ডাকাতের গল্প। বাড়ির চাকরদের মধ্যে বড়কর্তা ছিল ব্রজেশ্বর আর ছোট ছিল শ্যাম। সে বলতো রোঘো ডাকাতের গল্প। কেমন করে রোঘো ডাকাতি করে গরীব মানুষের দু:খ দূর করতো। ছেলেটা শুনছে অন্ধকারে রোঘো ডাকাতের গল্প। আর ঠিক সেই সময়টা লিখে রেখেছে কবিতায়
খোলা জানালার সামনে দেখা যায় গলি
একটা হলদে গ্যাসের আলোর খুঁটি
দাঁড়িয়ে আছে একচোখো ভূতের মতো
পথের বাঁ ধারটাতে জমেছে ছায়া
গলির মোড়ে, সদর রাস্তায়
বেলফুলের মালা হেঁকে গেলো মালি।
– উফ ভয় লাগছে তো
– ভয় পাচ্ছিস? কি ভীতুরে বাবা, বাইরে এদিকে ঝা ঝা রোদ্দুর
– তুমি তো ঘর অন্ধকার করে রেখেছো
– তাতে কি?
– আমিতো দেখতে পেলাম বাইরে একচোখো ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে পোস্টটা। আচ্ছা কবিতাটা কি রবীন্দ্রনাথের?
– সেই ছেলেটার
– তুমি কিন্তু ছেলেটার নাম বলছ না
– ধরে নাও না তোমার মতো একজন, তোমার সাথে মিলছে না কিছু কিছু?
– হ্যাঁ তো
– আরও মিলবে শোনো, তারও সকাল থেকে উঠে এক চিলতে বসার যো ছিল না। অন্ধকার থাকতে উঠে কুস্তির আখড়া, সেখান থেকে এসে বিজ্ঞান পড়া, তারপরেই ঘড়ি ধরে নীলকমল মাস্টারের পাঠশালা। অঙ্ক, বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন কত কি। তারপরে জোর করে তাকে পাঠানো হতো স্কুলে। বেশিরভাগ দিন সে মায়ের কাছে কেঁদে পড়তো পেটে ব্যথা বলে। তবুও কেউ শুনতো না। স্কুল থেকে ফিরেই আসতো জিমন্যাস্টিকের মাস্টার, তারপর ছবি আঁকার আর তারপর যখন সন্ধেতে আবার এলো ইংরিজির মাস্টার, তখন তার দুচোখ ভরা ঘুম। আর এমন নিয়মের কড়াকড়ি তার এক্কেবারে পছন্দ ছিল না।
– ঠিক তো, আমাকেও এমন করে মা বাবা
– তবে এই যে একটু আগে তুই হ্যারি পটার খেলছিলি মাদুর নিয়ে, তারও অমন একখানা খেলার জিনিষ ছিল
– কি?
– তার ঠাকুমার আমলের একখানা ভাঙা পালকি রাখা থাকতো বাড়ির এক কোণে। নবাবী আমলের কারুকার্য করা তাতে। শুধু ঐটাই ছিল তার নিজের একখানা খেলার জায়গা। ছুটির দিনে ওর মধ্যে বসে ভাবতো ওটা যেন সমুদ্রের এক নির্জন দ্বীপ আর নিজে যেন রবিনসন ক্রুশো।
– দেখেছো আমি নিজেকে হ্যারি পটার ভাবলেই তুমি খালি ইংরিজি বলে চিৎকার করো, এই ছেলেটাও তো নিজেকে রবিনসন ক্রুশো ভেবেছে
– হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে, তারপর একদিন কি হলো, তাদের বাড়িতে ডাকাতের খেলা দেখানো হলো, লাঠি খেলা, ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে হাতে মানুষ তুলে শূণ্যে ঘোরানোর খেলা আরও কত কি। পরেরদিন সে আবার চুপি চুপি উঠে পড়লো পালকিতে। তার মনে হতে লাগলো পালকি চলেছে দুলে দুলে, ওই দূরে কালো দীঘির জল, এইবার বেহারারা পালকি নামিয়েছে, এই হয়তো একটু জিরোচ্ছে বসে বসে, এমন সময় হারেরেরেরেরে
– ‘ওই যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে’। আমি তো জানি এই কবিতাটা, এটাতো রবীন্দ্রনাথের। তুমি রবীন্দ্রনাথের কথাই বলছো তাই না?
– আহা ওতে তো মা ছিলেন পালকিতে আর খোকা ছিল ঘোড়ায়
– হ্যাঁ ওটা হয়তো পরে লেখা, হয়তো আইডিয়াটা এখন থেকেই এসেছিলো
– হুম হতে পারে কিন্তু
– তাহলে রবীন্দ্রনাথই তো?
– আর একটু আছে, শুনে নাও, তারপর যা ভাববে। কাঠের সিঙ্গি ছিল একখানা তার। ওই যে সিংহ। একবার এমন পালকিতে বসে, সে ভাবলে সে যেন কোন পুজোর পুরোহিত, আর তাকে এই সিঙ্গিকে বলি দিতে হবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। একখানা কাঠি দিয়ে তার গলায় দিতে লাগলো কোপ, এদিকে আবার বলিদানের সময় জোরে জোরে মন্ত্র পড়তে হয়, সে একখানা মন্ত্র বানিয়ে খুব চেঁচাতে লাগলো
সিঙ্গীমামা কাটুম
আন্দিবোসের বাটুম
উলুকুট ঢুলুকুট ঢ্যামকুড়কুড়
আখরোট বাখরোট
খট খট খটাস
পট পট পটাস
ভারী মজা লাগলো ভন্ডুলের। কি মিষ্টি ছড়ারে বাবা। কিন্তু সে আবার চিন্তায় পড়ে গেলো
– ঠাম্মি এ মনে হয় রবীন্দ্রনাথ নয় না?
– কেন বল তো?
– না মানে এমন কাটুম- বাটুম ছড়া কি রবীন্দ্রনাথ লিখবে? উনি তো বুড়োমানুষ আর ভারী ভারী লেখা লেখে
– এই যে বললি তুই বীরপুরুষ কবিতা জানিস, সেটা কি ভারী কবিতা ?
– না কিন্তু সেটার মানে আছে, এর তো মানেই নেই কোনো
– তার মানে রবীন্দ্রনাথ মানে ছাড়া লিখতেই পারেন না?
– না
ঠাম্মি খুব জোরে হেসে উঠলো, “ভণ্ডুলবাবু রবীন্দ্রনাথও তো ছোট ছিলেন, তার কি হাবিজাবি লিখতে ইচ্ছে করতো না”?
– তাহলে তুমি এতক্ষণ রবিঠাকুরের গল্প বলছিলে তো, আর বোলো না
– কেন?
মুখ ভারী হয়ে গেলো ভন্ডুলের। “যারা ভালো ছড়া লেখে, গল্প লেখে, গল্প বলে, তারা সব কেমন বুড়ো হয়ে যায় আর মরে যায়. দাদাইও তো চলে গেলো আগের বছর। আমায় আর বোলো না আমার কষ্ট হয়”।
ঠাম্মি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো ভন্ডুলের। “তাতে কি? মারা গেলেই কি সব হারিয়ে যায়? এই যা যা শুনলে ভালো লাগলো না তোমার”?
– হ্যাঁ খুব ভালো লাগলো, সবচেয়ে ভালো লেগেছে ‘আন্দিবোসের বাটুম’.
– তাহলে আয় আর একটা কবিতা শেখাই
বিকেলের দিকে হালকা বৃষ্টি হয়ে গরমটা একটু কমলো। মা বাবার ঝগড়া মিটে গেছে মনে হয়, মা বেশ হাসি হাসি মুখ করে আদা চা করে নিয়ে এলো ঠাম্মির ঘরে। তারপর মা, বাবা আর ঠাম্মি তিনটে চেয়ারে গোল হয়ে বসলো বারান্দায়। আর মাদুরটার ওপর চড়ে বসে ভণ্ডুল দুলে দুলে বলছে সদ্য শেখা কয়েকটা লাইন
আবার ওগো শিশুর সাথী
শিশুর ভুবন দাও তো পাতি
করবো খেলা তোমায় আমায় একা।
চেয়ে তোমার মুখের দিকে,
তোমায় তোমার জগতটিকে
সহজ চোখে দেখবো সহজ দেখা।