Prayers of a Mother

Sanghamitra Ghosh Mitra

mom_daughther_sketch

The day you came to our lives,

The joy to behold you knew no heights

Amidst much happiness, bliss and glee

Unknowingly a drop trickled by,

Deep within, there was a fear

Unknown, yet so close, with all of us here!

Took a silent oath on that day,

To protect you from all dusk and grey,

To watch you take your first little steps,

To teach you keep yourself away from prey.

To see you grow, dance and play

Spread sunshine on your way,

Makes me happy every day.

Yet the fear keeps nudging me all along

Random thoughts keep lurking around.

Is she really safe and sound?

The mother in me questions every move

Watches every pair of eyes that follow you.

My heart aches every day when I bid you bye

To see your chirpy face back, gives me a high!

Is it the news around that wraps my happiness in bounds?

How I wish to see the world as when I was a child

Pray to Lord, let peace be found…

                                               Illustration by  Debojyoti Mahapatra

উড্ডীয়মান

নির্মাল্য সেনগুপ্ত

১)

খুব আনাড়ির হাতে ক্যামেরা ধরিয়ে দিলে ফোকাস ইন করার সময় যেমন ব্লারড ইমেজ পাওয়া যায় তেমনভাবে খোলা দরজার আলোটা দেখতে পেলেন অরুণবাবু। আর মিনিট তিনেক। তারপর সব জল্পনার অবসান। অদূরে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষ্যে। ভয় এবং চাপা উৎকণ্ঠার মধ্যে সিঁড়ির হাতল ধরে এগোলেন তিনি। এইবার, এইবার সমস্ত রহস্যের উন্মোচন ঘটবে। নয় তিনি মানব সভ্যতার ধারাকে এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে চলে যাবেন, নয়ত তাঁর আর অস্তিত্বই থাকবেনা। ভীতির পরিমাণ কম নয়, কিন্তু প্রত্যেক অতিমানবদেরকেই উন্নতির স্বার্থে এমন কাজ করতে হয়েছে যাতে মৃত্যুভয় প্রবল ছিল। দাঁতে দাঁত চিপলেন অরুণবাবু। ‘প্রায় অন্ধকার’ সিঁড়ি থেকে তিনি আলোর গভীরে প্রবেশ করলেন।

 

ঊনত্রিশ দিন আগের কথা…

অরুণবাবুর বয়স মেরেকেটে বাহান্ন হবে। অল্প বয়স থেকে ‘কম মায়না কাম খাটুনি বেশি’র চাকরী এবং অবিবাহিত হওয়ার জন্য অত্যাধিক পরিশ্রমের ফলে বার্ধক্যের ছাপ বেশ কিছু বছর আগেই চলে এসেছে। রাজবল্লভ পাড়ার বাসিন্দা অরুণলাল মহালনবীশের সঙ্গে বাকি বাসিন্দাদের যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। অরুণবাবু একটি জীবনবীমা কোম্পানির এজেন্ট। ওয়ান রুম ফ্ল্যাটে থাকেন। যা মাইনে পান তাতে একজনেরই চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়। তাই শখ আহ্লাদ, আমোদ, বছরে একবার ঘুরতে যাওয়া, সপ্তাহান্তে মদ্যপান, পাড়ার মোড়ের পান-সিগারেটের দোকানে মাসিক খাতা ইত্যাদি প্রায় সমস্ত বাঙালীদের স্বাভাবিক বিষয়গুলো থেকে তিনি বঞ্চিত। তাতে তাঁর দুঃখ করার মতন বিলাসীতাও নেই। তিনি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সস্তার রেজর দিয়ে দাড়ি কামিয়ে অফিসে যান। যাতায়াতে লোকাল ট্রেনে কমলা লেবু বা ঝাল বাদাম কিনে খান। ভেন্ডারে উঠে বাকি অফিস যাত্রীদের তাস খেলা দেখে প্রাণপণে শেখার চেষ্টা করেন। সারাদিন এর ওর বাড়ি প্রিমিয়ামের টাকা তুলতে বা নতুন ক্লায়েন্টদের ‘জীবনবিমা যে কতটা প্রয়োজন’ বোঝাতে সময় কেটে যায়। বাড়ি ফিরে এসে স্নান করে রাতের খাবার খেয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েন।

সেদিন সকালবেলা ঘরে অফিস যাওয়ার সময় অরুণবাবু ফ্ল্যাটের মেইন গেটে তালা লাগাচ্ছিলেন। একটি দম্পতি রিকশায় চেপে পাশের ফ্ল্যাটে এসে দাঁড়াল। ছেলেটির বয়স সাতাশ আটাশ। মেয়েটি ছাব্বিশের ঘরে হবে। সেদিকে তাকিয়ে অরুণবাবুর মন অল্প বিষণ্ণ হয়ে গেল। আর কিছু না হোক, একজন সহধর্মিণীর অভাব সবসময় টের পান তিনি। মাখো মাখো প্রেমের প্রয়োজন ছিলনা, অন্তত মুখ ঝামটা দেওয়ার জন্যও যদি কেউ থাকত, রান্নাটা নিজেকে করতে হতনা, সকালের শার্টটা ঘুম থেকে উঠে ইস্ত্রী করা পাওয়া যেত, ঘুমোনোর আগে কারও কপালে চুমু খেয়ে আদর করতে করতে ঘুমনো যেত একটু।

এসব ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তালার ফুটোয় চাবিটা সেট হচ্ছিলনা ঠিক করে। এমন সময় ডাক শুনে তাঁর সম্বিত ফিরল।

“দাদা শুনছেন?”

অরুণবাবু দেখলেন, সদ্য রিকশায় আগত দম্পতির ছেলেটি তাকে ডাকছে।

“অ্যাঁ?”

“বলছি যে, আপনি কি পুরনো বাসিন্দা? খাওয়ার জলের ব্যবস্থা কি করে করা যেতে পারে বলতে পারেন? আমার ওয়াটার পিউরিফায়ারটা কেনা হয়নি।”

“সামনের পরেশের দোকানে মিনারেল ওয়াটারের জারিকেন ভাড়া পাওয়া যায়। পঁয়তাল্লিশ টাকা দাম। একশ টাকা জমা রাখে। নতুন আপনারা?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ। আমি থাকব। ও আমার বান্ধবী রনিতা। আমার নাম সুমিত, সুমিত বিশ্বাস।”

ছেলেটি হাত বাড়িয়ে দিল সামনে। অরুণবাবু সেটি ধরে অল্প ঝাঁকালেন।

এরপর প্রায় কুড়ি মিনিট দুজনের মধ্যে কথা হল। অরুণবাবুর ছেলেটিকে বেশ ভাল লাগল। প্রতিবেশী হিসেবে খাসা। এমনিতে তাঁর আজ অবধি কোনও প্রতিবেশীর সঙ্গে সখ্যতা হয়নি।

দুদিন পরে অরুণবাবু সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন। কাজের চাপ কম থাকায় তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেছিল। বাড়িতে ঢোকার সময় সুমিতের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সে এক গাল হাসি দিয়ে বলল, “কী দাদা? এক বোতল বিয়ার হবে নাকি? একদম ঠাণ্ডা…”

অরুণবাবুর চমক লাগল মনে। কোনওদিন এসব ছুঁয়ে দ্যাখেননি। তাঁর বাবা জীবিতদশায় বলতেন, “ওসব বিষ রে অরু। ছুঁয়েছিস কী জ্বলে মরে গেছিস”। কিন্তু অফিসে নিত্য তাঁর কলিগদের মদ্যপানের গল্প শোনেন। আজ হঠাৎ তাঁর মনে অদম্য ইচ্ছে জাগল।

“চল, হয়ে যাক। আমি কিন্তু খাইনা একদমই।”

সুমিতের বেডরুমের খাটের এক কোণায় বসে দ্বিতীয় বোতলের শেষ ফেনা ফেনা অংশটুকু গলায় চালান করে দেওয়ার পর অরুণবাবুর মনে হল বমি হবে, হবেই। তাঁর মনে বহুদিনের জমা আবেগ যেন কণ্ঠনলী দিয়ে ঠেলে বেরোতে চাইছে। তিনি সুমিতকে জড়িয়ে ধরলেন দু হাত দিয়ে।

“ভাল লাগেনা ভাই, কিচ্ছু ভাল লাগেনা। কী আছে বল আমার জীবনে? এই অফিস আর বাড়ি। কিচ্ছু পাইনি আমি। টোটাল ফেলিওর। আমি মরিনা কেন…”

সুমিতেরও চোখ ভিজে আসছিল। সেও দু বোতল খেয়েছে। এমনিতে সে মাতাল হয়না, কিন্তু কেউ এমন ভেউ ভেউ করে কাঁদলে কার না কষ্ট হয়! সে অরুণবাবুর পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, “আরে দাদা, কাঁদবেননা, ভাবুন তো কত লোক রাস্তায় শোয়? তাদের কত কষ্ট?”

এমনভাবেই দুর্দান্ত একটা বন্ধুত্ব তৈরী হল দুজন অসমবয়সী মানুষের মধ্যে। অরুণবাবু জানলেন, সুমিত একজন কেমিস্ট। একটা ফার্মেসীতে চাকরী করে। তার বান্ধবী রনিতা তার অফিস কলিগ। সে পাগলের মত ভালবাসে তাকে। সে বিয়ে করতে ইচ্ছুক কিন্তু রনিতা আর কটাদিন অপেক্ষা করতে চায়। এছাড়া সুমিতের শখ আহ্লাদ সবকিছু হল পুরাণ বা মাইথোলজি। রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়ড-ওডিসি, বাইবেল সবকিছু তার ঠোঁটস্থ। বিভিন্ন দেশের পৌরাণিক কাহিনী জোগাড় করে পড়াই তার সখ। সুমিতের কাছেই তিনি জেনেছেন গ্রীক দেবী অ্যাফ্রোডাইটি আসলে সমুদ্রের ফেনা থেকে জন্ম নেন। ঘটোৎকচের ছেলে বার্বারিকের মৃত্যু কেমনভাবে হয়। শিখণ্ডীর আগের জন্মের নাম অম্বা, যে ভীষ্মর উপর প্রতিশোধ নিতে উভলিঙ্গ হয়ে জন্ম নেয় আবার ইত্যাদি। সুমিত ভীষণ হাসিখুশি এবং সবসময় উজ্জীবিত একটি ছেলে। অফিস আর পুরাণ বাদে যার জীবনের আর একটিই লক্ষ্য, রনিতাকে বিয়ে করা।

এভাবেই চলে গেল দুটো সপ্তাহ। সুমিত আর রনিতার সঙ্গে রেস্টুর‍্যান্টে খেয়ে এলেন একদিন। কিছু টাকা তাঁর পকেট দিয়েও খসল, কিন্তু তাঁর একঘেয়ে জীবনে যেন এই ছেলে মেয়ে দুটি নতুন হাওয়া নিয়ে এসেছিল হঠাৎ। রনিতা রবিবার সুমিতের সাথে দেখা করতে এলে তাঁর ডাক পড়বেই।

একদিন সপ্তাহান্তে সুমিতের বাড়ি বসে বিয়ার খাচ্ছিলেন দুজনে। আজ সুমিত দুপুর থেকেই একটু চুপচাপ। কারণ জিজ্ঞেস করাতে সুমিত বলল, “ সকালে রনিতার কলেজ জীবনের এক বন্ধুর সাথে আলাপ হল। সেও কেমিস্ট। বিদেশ থেকে পাশ করে এসেছে। অনেকক্ষণ গল্প হল।”

“বাহ, কিন্তু কিছু হয়েছে কি?”

“সে অদ্ভুত একটা গল্প শোনালো আমায়।”

“তাই? কী?”

“আপনি এলিক্সার কাকে বলে জানেন?”

“আমি পলিসি বেচার পদ্ধতির বাইরে খুব কম জিনিসই জানি হে। এই তোমার থেকেই শিখছি আজকাল। সেটা কী বস্তু?”

সুমিত একটু নড়েচড়ে বসে বিয়ারের বোতলে একটা ঢোক মেরে বলল, “ইস্ট এশিয়ান মাইথোলজি অনুযায়ী মুন র‍্যাবিট এক ধরণের মিষ্টি তরল পানীয় বানায়, যাকে বলে দ্য এলিক্সার অফ লাইফ’ অর্থাৎ হিন্দু পুরাণ মতে যাকে বলা হয় অমৃত। এখন চীনা, জাপানি ছাড়াও ইজিপশিয়ান পুরাণ মতে দেবতা ‘থথ’ যার দেহ মানুষের এবং মাথাটা ইবিসের, সে এক ধরণের তরল পান করত, যার ফলে সে অসীম শক্তি ধারণ করত। কিন্তু পরে থথ হয়ে ওঠে মানসিক রোগী। যাই হোক, রনিতার এই বন্ধু অশোক ইজিপ্টে পিরামিডের কেমিক্যাল সল্যুশন নিয়ে কাজ করতে গেছিল। সেখানে সে নাগ হামাদি লাইব্রেরীতে একজন পুরাতত্ত্ববিদের সাহায্যে একটি প্যাপিরাস কোডিস থেকে এই এলিক্সারের ফর্মুলা পায়। সেটা নিয়েই আজ বলছিল সে।”

এত তত্ত্ব মাথায় রাখতে পারছিলেননা অরুণবাবু। এমনিতেই এক বোতল বিয়ার শেষের দিকে। তাঁর মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করে দিয়েছে। তিনি বললেন, “তা এই নিয়ে তুমি এত চিন্তিত কেন?”

সুমিত বলল, “শুধু এলিক্সার নয়, ডার্ক এলিক্সার নামের আরেকটি জিনিসের সন্ধান পেয়েছে অশোক। যা এর আগে কোনওদিন কোথাও জানা যায়নি। এর ইনগ্রিডিয়েন্টটা সে আমাকে বলল। আমি ভাবছিলাম যদি…”

“কী?”

“যদি আমার ল্যাবে সেটা বানিয়ে দেখি। সে এসব জানলেও বিশ্বাস করেনা কিছু হতে পারে। সে শুধু কৌতুহলে জেনেছে। আমি ভাবছি যদি চেষ্টা করে দেখা যায়…”

“কর কর… তোমার অনেক নাম হোক…” অরুণবাবু খালি বোতলটা রেখে আরেকটা বিয়ারের ভর্তি বোতল হাতে তুলে কাঁপা গলায় বলে উঠলেন, ‘উল্লাস…’

 

২)

এরপর দিন পাঁচেক সুমিতের দেখা পাওয়া গেলনা। এরপর একদিন রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরলেন অরুণবাবু। মেইন গেটের দিকে এগোতে দেখলেন সুমিত দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এত রাতে?”

“একত্রিশটা জিনিস লেগেছে মোট। অ্যাসিটামিনোফেন, অ্যামিনপাইরিন, অ্যান্টিপাইরিন, ক্যাফেইন…”

“থামো থামো। কী বলছ?”

“ডার্ক এলিক্সার রেডি দাদা। আমি অলরেডি নিয়ে নিয়েছি কিছুটা। আস্তে আস্তে বল পাচ্ছি। দশ দিন টানা নিতে হবে। তারপর…”

অরুণবাবু চমকে গেলেন। এমন কী সত্যি হয়? তাঁর জিনিসটা একবার দেখার ইচ্ছে হল খুব।

“একবার দেখা যাবে ব্যাপারটা?”

সুমিত দুপাশ একবার দেখে নিয়ে বলল, “আজ রাতে না হয় আমার ঘরে থেকে যাবেন। চলুন…”

মিনিট ছয়েকের মধ্যে সুমিতের ঘরে পৌঁছলেন তিনি। সুমিত একটা নীল রঙের ঘঁষা কাঁচের বোতল নিয়ে এল।

“দাদা, রনিতা যেন না জানে…”

অরুণবাবু মাথা নাড়লেন। খুব ঘন তরলটা। কি হতে পারে উনি ব্যবহার করলে?

সুমিত যেন অরুণবাবুর মনের কথা শুনে ফেলে বলল, “আপনার চাই?”

অরুণবাবু থতমত খেয়ে তাকালেন সুমিতের দিকে। “মানে… আমি তো জানিনা… কী থেকে কী হবে…”

“আমি কিন্তু দাদা এটা দুজনের জন্য তৈরী করেছি…”

অরুণবাবু প্রমাদ গুনলেন। সত্যিই কি এমন কোনও গুণ আছে এটায়? সারা জীবন লাঞ্ছনা আর গঞ্জনার জীবন কাটিয়েছেন। প্রথমে বাবার ধ্যাতানি, তারপর স্কুল কলেজে বন্ধুবান্ধবের ইয়ার্কি, অফিসে বস-কলিগের ব্যঙ্গ, একাকীত্বময় জীবন, কতদিন এসব সহ্য করবেন তিনি? আর কতদিন?

সুমিতের দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় অরুণবাবু বললেন, “এটা কিভাবে খাব? এমনি? না জল দিয়ে?”

সুমিতের ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটল। সে একটা ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ নিয়ে এল। এরপর অরুণবাবুর পাঞ্জাবীর হাতাটা গুটিয়ে শিরায় সূঁচ ফুটাল। অরুণবাবু ইষৎ কেঁপে উঠলেন। মাথাটা অল্প ঝিমঝিম করে উঠল, যেমন বিয়ার খেলে হয়। মুখের ভিতরটা তেতো লাগল হঠাৎ খুব।

সুমিত একটা ছোট বোতল আর এক বান্ডিল ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ এনে অরুণবাবুর হাতে দিয়ে বলল, “রোজ সকালে খাওয়ার পর। এবার ভাগ্য। দেখা যাক কী হয়…”

কিছুক্ষণ গল্প করার পর অরুণবাবু ঘুমিয়ে পড়লেন সোফায়।

এরপর কেটে গেল তিনদিন। কিছুই আলাদা টের পাননি তিনি। কিছুই হবেনা শুধু শুধু সুঁচে বিদ্ধ করা নিজেকে। সুমিতের উপর দুর্বলতা তাই নইলে এসব করতেননা তিনি। তার উপর বেশ মাথা ঝিমঝিম করে। বসের সামনে দুবার তুতলে গেছেন আগেরদিন। অরুণবাবু ঠিক করেছেন আর দিন তিনেক দেখবেন, তারপর আর নয়। বোতল আর সিরিঞ্জটা ফেলে দেবেন।

গতকাল সুমিত এসেছিল। ওর উচ্ছাস ভাবটা কম যেন। রনিতার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। মন মেজাজ ভাল নেই। সে এলিক্সার সেবন করছে কিনা আর জিজ্ঞেস করলেননা। বেচারার মনটা খারাপ বেশ। তাঁর প্রেমিকা বা স্ত্রী না হওয়ায় এই জ্বালা থেকে মুক্ত তিনি।

টিফিন খাওয়ার সময় শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছিল বেশ। জিনিসটা নেওয়ার পর থেকেই সারাদিন কেমন ক্লান্ত ভাব লাগে। কিছু ক্ষতি হচ্ছেনা তো? রোগা হচ্ছেন কী? অরুণবাবুর মনে পড়ল তাঁর বাবা বলতেন, শরীরে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে কিনা তা জানবার প্রাথমিক উপায় হল ওজন চেক করা।

অফিসের নিচেই ওষুধের দোকান। অরুণবাবু নেমে এসে সামনের দোকানটায় ঢুকলেন। ডিজিটাল মেশিন। দু টাকা ফেলতে ওজন ফুটে উঠল স্ক্রীনে।

মেশিনটা খারাপ। অরুণবাবু দেখলেন ওজন দেখাচ্ছে চব্বিশ পয়েন্ট পাঁচ। দু টাকা গচ্ছা গেল। বিরক্তিসূচক আওয়াজ বের করে, দোকানীর দিকে একটা অল্প কড়া নজর দিয়ে এগিয়ে গেলেন।

মিনিট দুয়েকের মধ্যে আরেকটা দোকান। এখানেও একই রকম মেশিন। দুটাকা হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন মেশিনে। টাকা ফেলার তিন সেকেন্ড পর ওজন দেখাল। পঁচিশ পয়েন্ট দুই।

অরুণবাবু বুঝলেন খুব বেশি গরম না থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ তিনি দরদর করে ঘামতে শুরু করেছেন।

“দাদা মেশিনটা ঠিক আছে?”

দোকানি একটা অবজ্ঞাময় অভিব্যক্তি দেখিয়ে বলল, “আগের মাসের কেনা। এটাই মার্কেটে লেটেস্ট। হাতিরও এগজ্যাক্ট ওজন দেয় দাদা…”

অরুণবাবু নামলেন। পকেট হাঁতড়িয়ে দেখলেন আরও চারটে দু টাকা খুচরো আছে। একটু দূরে  আরেকটা দোকান। সেখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। ওজন এল চব্বিশ পয়েন্ট সাত।

এতগুলো মেশিন খারাপ হতে পারেনা। কি হয়েছে তাঁর!! অরুণবাবু হন্তদন্ত হয়ে ফিরলেন অফিসে। ডেস্ক স্টাফ নিখিলের সামনে এসে বললেন, “দ্যাখো তো নিখিল, আমাকে কী খুব রোগা লাগছে?”

নিখিল একবার তাঁকে আপাদমস্তক দেখে বলল, “কই না তো। বরং একটু মুটিয়েছেন মনে হচ্ছে।”

বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিলেন অরুণবাবু। এটা কী হচ্ছে! তিন চার মাস আগে একবার মেট্রোতে ওজন করেছিলেন। বাষট্টি কেজি দেখিয়েছিল। সেখান থেকে পঁচিশে নামে কী করে! তাঁর তো মরে যাওয়ার কথা! তবে কী ওই এলিক্সারের জন্য…

অরুণবাবুর মনে হল তাঁর নিজেকে বেশ হালকা লাগছে। কাজকর্মও বেশ তাড়াতাড়ি করে ফেলতে পারছেন। তৎপরতা বেড়েছে। শুধু মাথা ঝিমঝিম।

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সেদিন রাতে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। হঠাৎ করে একটা কুকুর এসে পড়ল সামনে। আচমকা এসে যাওয়ায় আঁৎকে উঠে একটা ছোট্ট লাফ দিয়ে ফেললেন।

পা যখন মাটি ছুঁল, অরুণবাবু আবিষ্কার করলেন লাফ দেওয়ার আগে এবং পরের জায়গাটার মধ্যে দূরত্ব প্রায় পাঁচ মিটার!

এ কি হচ্ছে! অরুণবাবুর খুব ভয় লাগল। এ সব তো অস্বাভাবিক ব্যাপার। কোনওদিন স্কুল কলেজে লং জাম্পে নাম দেননি তিনি। তাঁর চেহারা বরাবরই ভারীর দিকে। এ সব কী তাহলে এলিক্সারের জন্য?

হঠাৎ খুব ফুর্তি জাগল তাঁর মনে। বেশ কিছুটা ছুটে এসে তিনি লাফ দিলেন।

যখন জমিতে নামলেন, অরুণবাবু বুঝলেন প্রায় ১০ মিটার তিনি শূন্যে ছিলেন।

এরপর অরুণবাবু প্রায় আধ ঘণ্টা লাফিয়ে বেড়ালেন সারা পাড়া।

 

৩)

পরের দিন খুব সকালে সুমিত এল অরুণবাবুর বাড়িতে। তিনি দেখলেন, সুমিতের দু চোখের নীচে লম্বা কালো ছোপ পড়েছে। হঠাৎ সে অরুণবাবুকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করল।

“আমার কিচ্ছু ভাল লাগছেনা দাদা। রোজ ঝগড়া হচ্ছে রনিতার সাথে। ওই ওষুধটাও কিচ্ছু কাজ করলনা। আমি এভাবে বেঁচে থেকে কী করব বলুন? আমার জীবনে কী একটু শান্তি থাকবেনা?”

অরুণবাবুর এখন এই কান্নাকাটি ভাল লাগছিলনা। তিনি ঠিক করেছেন আজ একটু বেশি পরিমাণে এলিক্সারটা ইনিপুট করবেন। তবু তিনি সুমিতকে সান্ত্বনা দিতে পিঠ চাপড়ে বললেন, “আরে একি? এভাবে ভেঙে পড়ছ কেন? এত ভাল চাকরি কর তুমি। এত হাসিখুশি ছেলে। এমন করতে আছে? ঠিক কাজ করবে। ঝগড়াও হবেনা। রনিতাও এত ভাল মেয়ে। খুব ভাল থাকবে তোমরা…”

সুমিত চোখের জল মুছে বলল, “আপনি কিছু বুঝলেন? কাজ হল কিছু?”

অরুণবাবু ভাবলেন কিছুক্ষণ। এখনই বলা ঠিক হবেনা সুমিতকে।  ওঁর কাজ করেছে শুনলে সুমিত আরও ভেঙে পড়তে পারে।  সবার ভাগ্য তো আর এক হয়না।

“নাহ্‌, কিছুই হয়নি। তবে আরো তো ছদিন বাকি।  এখনই হতাশ হোওনা।  আচ্ছা সুমিত, আজ অফিসে একটু কাজের চাপ আছে। স্নানে যেতে হবে। তাই…”

সুমিত চলে গেল। অরুণবাবু ডার্ক এলিক্সারের বোতলটা হাতে নিলেন। আজ একটু বেশি করে…

সেদিন রাতে অফিস থেকে ফিরে অরুণবাবু চলে গেলেন পাড়ার মাঠে। দশ বারটা কুকুরের চেঁচামেচি পার করে তিনি এসে দাঁড়ালেন এক প্রান্তে। নিস্তব্ধ অন্ধকার মাঠ। কারও আসার সুযোগ নেই এখন।

কিছুটা দৌড়ে এসে লাফ দিলেন তিনি। দেওয়ার সাথে সাথে হাত দুটো দুদিকে ছড়িয়ে গেল তাঁর নিজে থেকে।

প্রায় পাঁচ মিনিট পর যখন মাটিতে নামলেন, অরুণবাবু বুঝলেন, আর কিছু নয়, গত পাঁচ মিনিট তিনি উড়ে বেড়িয়েছেন সারা মাঠ।  হয়তো এই যুগের তিনি প্রথম মানুষ যে পাখির মত উড়ল এতক্ষণ।

রাত তিনটের সময় বাড়ির সামনে ল্যান্ড করলেন তিনি। বলাই বাহুল্য মাঠ থেকে বাড়ির রাস্তাটা তিনি হেঁটে আসেননি।

তিনদিন পর রবিবার এল। সুমিতের খোঁজ নিতে তার বাড়ি গেলেন অরুণবাবু। কলিং বেল টেপার দু মিনিট পর দরজা খুলল।

চমকে গেলেন অরুণবাবু। সুমিতকে চেনা যাচ্ছেনা প্রায়! সারা শরীর যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। গায়ে কালো কালো ছোপ। গাল দুটো ভেঙে যেন একে অপরকে ছুঁতে চাইছে। মাথার চুলের ঘনত্বও কম। চোখ দুটো কোটরের ভিতর ঢুকে গেছে পুরো। বোঝা যাচ্ছে সুমিত কাঁদছিল এতক্ষণ।

“একি অবস্থা হয়েছে তোমার? শরীরের কী হাল বানিয়েছ? এমন করছ কেন তুমি?”

অনেকদিন গরমের পর যেমন হঠাৎ বর্ষা আসে, সেভাবে অঝোরধারে কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়ল সুমিত। অরুণবাবু কিছুতেই সামলাতে পারছিলেননা। সে কী বলছে এক বর্ণও বোঝা যাচ্ছেনা। রনিতার নামটা শোনা যাচ্ছে মাঝে মাঝে। কিছুক্ষণ পর তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ফিরে এলেন সুমিতবাবু। হাসিখুশি ছেলেটা পুরো ধ্বংস হয়ে গেল। কিন্তু এসব এখন তাঁর ভাবার সময় নয়। গতকাল প্রায় এক ঘণ্টা ওড়ার পর তিনি মাটিতে নেমেছেন। কিন্তু এখনও এই উড়ন্ত ব্যাপারটা তাঁর কন্ট্রোলে আসেনি। আর বাকি দুদিন। তারপর ডার্ক এলিক্সার শেষ হয়ে যাবে। তিনি চাননা ওটা শেষ হওয়ার পর তাঁর এই ক্ষমতা চলে যাক। তাই নিত্য প্র্যাকটিস চালাচ্ছেন। মানব সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন হতে চান তিনি।

 

দশ নম্বর দিন। খুব আনাড়ির হাতে ক্যামেরা ধরিয়ে দিলে ফোকাস ইন করার সময় যেমন ব্লারড ইমেজ পাওয়া যায় তেমনভাবে খোলা দরজার আলোটা দেখতে পেলেন অরুণবাবু।  আর মিনিট তিনেক। তারপর সব জল্পনার অবসান। অদূরে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষ্যে। ভয় এবং চাপা উৎকণ্ঠার মধ্যে সিঁড়ির হাতল ধরে এগোলেন তিনি। এইবার, এইবার সমস্ত রহস্যের উন্মোচন ঘটবে। ছাদের দরজার দিকে এগোলেন অরুণবাবু। এলিক্সার শেষ। আজ তিনি ঝাঁপ দেবেন ছ তলার ছাদ থেকে এবং উড়ে বেড়াবেন নিজের ইচ্ছেমত। কেউ আটকাতে পারবেনা তাকে আর। বুকের ভিতর নিশ্বাস প্রশ্বাস পাগলের মত চলাফেরা করছে। মৃত্যুভয় আছে, কিন্তু সমস্ত বৈজ্ঞানিকই জীবনের মায়া তুচ্ছ করে এক্সপেরিমেন্ট করেছে চিরকাল। অদূরে গান বাজছে ‘আমার বেলা যে যায়, সাঁঝবেলাতে…’ পাঁচিলের উপর এক পা দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন অরুণবাবু। নীচে একটা পানা পুকুর। সেখানে একটা বক কুঁচো মাছ ধরে উড়ে গেল আকাশে। অরুণবাবু ঠিক করলেন তিনি ওই বকটাকে পিছু করবেন।

পাশের দিকে তাকালেন তিনি। ঠিক তক্ষুনি পাশের ছাদ থেকে পাঁচিলের উপর একটি শীর্নকায়, প্রায় মাথায় টাক পড়ে যাওয়া সাতাশ আটাশ বছরের ছেলে পাঁচিলের উপর উঠে এসে দাঁড়াল। দুজনে তাকাল একে অপরের দিকে। সুমিত চায়না আর এই জীবন রাখতে। গত কাল চাকরি চলে গেছে তার। রনিতার সাথে সম্পর্কও শেষ করে দিয়েছে সে, রনিতার প্রচুর কাকুতি মনতি সত্ত্বেও।

দুজন অসমবয়সী মানুষ কিছুক্ষণ চেয়ে রইল একে অপরের দিকে। তারপর প্রায় একই সাথে ঝাঁপ মারল।

৪)

সাব ইন্সপেক্টর তথাগত মজুমদারের কাছে ফোনটা এল বেলা বারটার সময়। এমনিই পঁচিশে বৈশাখের জন্য সারা এলাকাময় রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেছিল। বাইরে রোদের তেজও কম নয়। এই সময় ফোন এল, কাছেই একটা বহুতল ফ্ল্যাটের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে একজন আত্মহত্যা করেছে। মাথা ফেটে চৌচির, মাল্টিপল বোন ফ্যাকচার। শিড়দাঁড়াটা ভেঙে বুক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেছে। সেই দেখে লোকে বেমালুম ভির্মি খাচ্ছে। এক্ষুনি স্পটে গিয়ে ভীড় সামলাতে হবে অ্যাম্বুলেন্স আসা অবধি। একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠলেন তথাগতবাবু। মানুষ যে কেন আত্মহত্যা করে…

 

সাতদিন পরের কথা…

গোয়েন্দা দপ্তরের অভীক ব্যানার্জী ঢুকল আই.জি বিকাশ স্যানালের কেবিনে। এই ছেলেটার প্রতি অগাধ বিশ্বাস বিকাশ সান্যালের। কঠিন থেকে কঠিনতর কেস দুদিনে সমাধান করে দেয় অভীক। তাই আজকেও পজেটিভ কোনও উত্তর চাইছিলেন তিনি।

“কেস অলমোস্ট সলভড স্যার…”

“অ্যাজ ইউজুয়াল অভীক। দ্য ডিপার্টমেন্ট ইজ প্রাউড অফ ইউ। তুমি যেটা সন্দেহ করছিলে সেটাই?”

“হ্যাঁ স্যার। ক্লিন কেস অফ লাভ ট্রায়াঙ্গল। রনিতা নামের মেয়েটি চাইছিল সুমিতের সাথে সম্পর্কটা না রাখতে। এদিকে সুমিত জোর দিচ্ছিল বিয়ের জন্য। এমন অবস্থায় রনিতার প্রেম হয় সায়াকাট্রিস্ট ডক্টর অশোক ভট্টাচার্য্যর সাথে। অশোকও রনিতার প্রেমে পাগল হয়ে যায়। অশোক শোনে সুমিতের অদম্য কৌতূহল মাইথোলজিতে। তখন সে প্ল্যান করে যেমন করে হোক সুমিতকে কিছু করে সরিয়ে দিতে হবে রনিতার জীবন থেকে। সে রনিতার বন্ধু সেজে দেখা করে সুমিতের সাথে এবং কোনও গল্পের মাধ্যমে সুমিতকে রেসিপি দেয় ডি.এম.টি এবং হেরোইন এর এক কম্বিনেশনের। সে জানত সুমিত কেমিস্ট। তার এর ইনগ্রিডিয়েন্ট জোগাড় করতে অসুবিধে হবেনা। হাইলি ডিপ্রেসিভ স্কিজোফ্রেনিয়ার সৃষ্টি করে এই ড্রাগ সেবন। সে এই গল্পটা এমনভাবেই ফাঁদে যাতে একটা ভাল পরিমাণ ওষুধ সুমিত ব্যবহার করে প্রতিদিন। প্রায় ২৫ গ্রাম মাদক পাওয়া গেছে সুমিতের দেহে। এর থেকে পজেটিভ স্কিজোফ্রেনিয়া হওয়ারও একটা মাইল্ড চান্স থাকে কিন্তু তা এক লাখে একটা। তার প্ল্যান অনুযায়ীই সে এই মাদক সেবন করে এবং মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। তবে স্যার এক্ষেত্রে অশোকবাবুর এগেইন্সটে কদ্দুর অ্যাকশন নেওয়া যাবে বলতে পারছিনা। ম্যাক্স টু ম্যাক্স লাইসেন্স ক্যানসেল করানো যেতে পারে। কিন্তু এরা হাই প্রোফাইল লোক, ভাল উকিল লাগিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে অনায়াসে…”

বিকাশ সান্যাল কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে থাকলেন। তারপর বললেন, “হুমম, আর ওই ভদ্রলোক? সুমিতের পাশের বাড়ির অরুণবাবু? তিনি নিখোঁজ হলেন কেন সুমিতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পর?”

অভীক ব্যানার্জী একটু মাথা চুলকে ইতস্তত করে বলল, “এই জায়গাটাই আনসলভড স্যার। ওই ভদ্রলোকও একই ড্রাগ নিচ্ছিলেন সুমিতের সাথেই। ওর বাড়িতেও সিরিঞ্জ এবং কন্টেইনার পাওয়া গেছে। কিন্তু তিনি যে কোথায় গেলেন! আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। এনার মাথারও প্রবলেম দেখা দিয়েছিল। ওর অফিসের এক কলিগ নিখিল দাসকে অদ্ভুত গল্প শোনাচ্ছিলেন ইদানীং…”

“কী গল্প?”

“কিসব উনি নাকি উড়তে পারেন। মানব সভ্যতার কল্যাণে সে বিদ্যা লাগাবেন। এই সব পাগলের বুক্‌নি।”

“কিন্তু তিনি নিরুদ্দেশ হলেন কেন? খোঁজ নাও। হয়ত কেসটা এতটা সোজা না যতটা তুমি ভাবছ।”

অভীক মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। বিকাশ সান্যাল ভাবতে শুরু করছিলেন অরুণবাবুর নিরুদ্দেশের কারণ। তবে কী আরও জটিল কোনও বিষয়? লাভ ট্রায়াঙ্গলের বাইরে বেরিয়ে কিছু? উড়তে পারার বিদ্যাটার রহস্যটা কি???

যদিও কিচ্ছুক্ষণ পরেই একটা ফোন তাঁর চিন্তার অবসান ঘটাল। বিকাশ সান্যাল জানতে জানতে পারলেন, সুমিতের ফ্ল্যাটের সামনের পানা পুকুর থেকে একটা লাশ উদ্ধার হয়েছে এক্ষুনি। ফুলে ফেঁপে একসা কাণ্ড। পাড়ার লোকেরা লাশ সনাক্ত করেছে। অরুণলাল মহালনবীশ, যার উড়ান শেষ হয়েছিল পুকুরের জলের নীচে…

Stoop To Conquer

Dr. Shubhadeep Sinha

You don’t need to fight every battle.
You don’t heed, set the world alight, with every rattle.
Stoop to conquer, in unsure circumstances, 
Loop the stir, take your chances.
Au revoir at times to macho display,
True valour shines when you save the day.


It’s not rude to get away from harm,
Better to stay, play and be calm.

ঘরোয়া মোহিতো শরবত

মৌমিতা মন্ডল
moumita_recipe-pic

কি কি লাগবে :-

আদা (কুচি এবং জুলিয়ান করে কাটা), পুদিনা পাতা, পাতিলেবু , চাট মশলা,বিট নুন, কোল্ড ড্রিঙ্ক (যেকোনো সাদা রঙের যেটা নিজের পছন্দ), বরফের টুকরো। সবকিছু পরিমাণ মত নিতে হবে।

কি ভাবে করবেন :-

আদা কুচি আর জুলিয়ান করে কেটে নিতে হবে।এরপরে পুদিনা পাতা ডাল থেকে কেটে নিয়ে পরিষ্কার জলে ধুয়ে রাখতে হবে আর একটা ডাল আর পাতা শুদ্ধ রেখে দিতে হবে সাজানোর জন্য। এরপরে হাম্মামদিস্তে নিয়ে তাতে আদা কুচি, পুদিনা পাতা দিয়ে থেঁতো করে নিতে হবে,তারপরে অল্প চাট মশলা, বিট নুন এবং লেবুর রস যোগ করে চামচ দিয়ে একটু মিশিয়ে নিয়ে তারপরে এই মিশ্রণটা একটা কাঁচের গ্লাসে নিয়ে তাতে কোল্ড ড্রিঙ্ক (যেকোনো সাদা রঙের যেটা নিজের পছন্দ) দিতে হবে।এরপরে চামচ দিয়ে আবারও মিশিয়ে নিয়ে বরফের টুকরো, জুলিয়ান করে কাটা আদা আর পুদিনা পাতার ডাল দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন মোহিতো শরবত। চটজলদি বাড়িতেই মোহিতো শরবত বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিন।

What’s In A Name?

Anindita Chowdhury

whats-in-a-nameanindita

It was my first day at Jadavpur University. I had queued up to register my name at the Arts Faculty building with little idea what fate had in store for me. I was about to put down my name when I casually scanned the names listed above. There it was; with growing dismay I noted there was another Anindita in my class. Well, I squirmed at the loopy handwriting in which she had scrawled ‘Anindita Basu’ and took comfort from the fact at least our last names were not the same. In fact, all my school life and even in dance or art classes, whatever was my pursuit, there was always another Anindita around. There is even a bus stop called ‘Anindita’ in Salt Lake. Imagine my consternation when conductors of private buses start bellowing “Anindita, Anindita…” as soon as the bus approaches the designated stop. But there was more to come. As I passed on the pen to the next person, I realised she too had scribbled ‘Anindita’, this time followed by ‘Banerjee’ and co-incidentally the next one too signed up as Anindita Pal. Three namesakes in the class and amidst all the giggling at the silly coincidence at our expense, I thought I could strangle my dead grandmother for choosing this name. I wonder along with some thousands of Aninditas who populate this planet why was this name so popular among Bengali parents who chose it for their daughters, majority of whom were born during the seventies.

Well, according to my mother, I was destined (or doomed) to be named Anindita. Apparently, my paternal grandmother had watched a film starring Shubendu Chatterjee and Mousumi Chatterjee called ‘Anindita’ and liked it enough to name me after the heroine. She had named her earlier granddaughter (only a year older to me) ‘Nandita’ and thought Anindita would be perfect for the next one. It did not matter that we already had another Anindita in the family, on my mother’s side. Ours was a typical matriarchal family and despite the presence of my soft-spoken, freedom fighter grandfather everyone knew who wore the pants in the family. My mother had worked up her courage and approached the matriarch with the suggestion for a change of name since her elder sister’s granddaughter too had been named Anindita, some months ago. “Ask your sister to change her granddaughter’s name. I would never change mine,” she had thundered (almost in Lalita Pawar style) and my mother promptly lost all her courage and the chance to rename her daughter. Apart from that distant niece, two of my sisters-in-law (married to cousins) are Aninditas and there are scores of Aninditas, counted among friends, neighbours, casual acquaintances and so on.

So I was stuck with Anindita just because of the silly film and I wondered if it was the same with all those who shared my name. And it was not even a masterpiece (what would I have given to be named ‘Subarnarekha’ or ‘Komalgandhar’ after Ritwik Ghatak’s iconic films) but a typical tear-jerker, pot boiler where the heroine refuses to leave her ill husband for her handsome lover boy. The movie is available on YouTube but I simply could not gather enough interest to sit through it.

Anyway, having four Aninditas around did not prove to be much of a trouble, thanks to our jugaad-wired brains. After a few days of confusion everything simply fell in place. Anindita Basu who had been around for a longer time retained her name. While Anindita Banerjee, quite a tomboyish character, promptly started responding to the bureaucratic sounding sobriquet of ‘Banerjee’ without any qualms, Anindita Pal had already been rechristened as ‘lappie’ (lap being the anagram of Pal) by her school friends and we simply continued to call her so. I acquired a pet name ‘Annie’ and the best part was that Banerjee, Lappie and I turned out to be great friends during our university days. Since attendance register or roll call was a non-existent custom in JU, we were saved from the mortification of having a long list of Aninditas called out in every class and consequently almost forgave my grandmother for her Himalayan blunder.

I had always resented my name, frankly because it sounded plebeian. My misfortune appeared to be far more aggravated than it really was because my close friend, Pushya had such an uncommon, even exotic name chosen by a thoughtful father with a creative bent of mind. He named his daughter after the star of the month of Poush, in which she was born. However, in school or college, a new teacher would invariably stumble upon her name during roll call. Then either he or she would tentatively pronounce one syllable at a time, as “Pu-sshh– yaaa” or brazenly decide it to be a spelling mistake and call out “Pushpa”. Then Pushya would raise her hand, get on her feet and painstakingly correct her, a task she genuinely hated, every single time. At that age we were more eager to blend in the crowd than stand out, especially when you had just got into the habit of bunking classes.

Calcutta University in its customary arrogance often changed the spellings of names to what they deemed to be the right one, not sparing any feelings for the poor examinee who thought, he, at least, knew how to spell his own name in the admit card and answer sheets even if the university was really grouchy and miserly when it came to doling out marks. And when Pushya’s marksheet came we found some smart clerk had decided that she had misspelt her name and rectified it to ‘Pushpa’. It was easier to file an affidavit in court and change her name to Pushpa than run from pillar to post and get her name corrected in the records of a 150-year-old university. And despite their mistake, the university did not give her a typed marksheet like the rest of us and she had to remain content with a handwritten one. No wonder, when the time came to name her new-born son, Pushya chose an utterly common and even plain ‘Pratik’ to avoid any future mistake by the smart, know-it-all clerk who seems to hover in every institution.

Deciding upon a name is a serious job and I cannot but recall an incident involving a past chief minister who had the honour of naming a new-born calf born through artificial insemination. There were titters all around when the veteran who prided himself to be a cerebral, well-read, cultured man chose the name ‘Dhabali’ borrowing from texts of Tagore, a clear misnomer as the calf turned out to be chestnut brown!

I have come across all kinds of parents, mostly fathers, confronted with the task of naming their children; some were indifferent like mine, happy that someone else had done the needful, or thoughtful and creative ones like Pushya’s father though it had boomeranged to an extent, or forgetful ones like an uncle who forgot the child’s name when he took her to school for admission and blurted out the first thing that came to his mind, but it is the quirky ones who can really cause lifelong misery for their children. When my brother-in-law was born (he is nine years younger to my husband, Indranil) everybody declared that his name should rhyme with the first born. My mother-in-law, a sane post-graduate in Sanskrit had thought of Kaustav (both are gemstones, forgive the maternal pride) but her more flamboyant husband decided to amalgamate the ‘Nil’ from Indranil with Mac of John McEnroe, his favourite tennis player and named him ‘Macneil’. “Is he a foreigner? Is he a Christian?” people ask with unabated curiosity, right from teachers, conservative parents of friends, colleagues to even his in-laws. Such queries are a lifelong cause for embarrassment though he has become quite sporting about it after long years of practice.

So, when one asks what’s in a name I think there’s a lot more than what Mr Shakespeare had given credit to, courtesy his immortal words that a rose by any other name would smell as sweet. I, for one, can vouch that it does matter since I share my name with every fifth girl born during the seventies or to the millions of Subrata, Debashis and Kaushik who walk on this terra firma and bear the same cross as I do.

  Illustration by  Aditi Chakaraborty

খাস্তা কচুরি

সোমা দাস

ইস্কুল ও কলেজ জীবনে বিশেষভাবে কোনওদিনই রান্নাঘরে ঢুকিনি। পড়াশুনা, গান-বাজনা, খেলাধূলা, বন্ধুবান্ধব এসব নিয়েই কেটেছে দিন। কিন্তু ১৯৯২ সালে বিয়ের পর থেকে, কখন যে রান্না প্রেমিক হয়ে উঠলাম তা নিজেই বুঝতে পারিনা। এখন আমার রান্নার খাতাটা গানের খাতার থেকে ভারি হয়ে গেছে। তার থেকেই একটা প্রিয় রেসিপি আজ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আশা করি সবার ভাল লাগবে।

পরিমাণ- ৫-৬ টা মত

কচুরির খোলের জন্য লাগবেঃ

ময়দা- ২ কাপ

নুন- ১ চামচ

চিনি – ১ চামচ

ডিম – ১টা, ফেটানো

ময়ামের সাদা তেল – ৩-৪ টেবিল চামচ

সাদা তেল – ভাজার জন্য

 

কচুরির পুরের জন্য লাগবে

চিকেন কিমা/পেস্ট- বড় একবাটি

ধনে গুঁড়ো – ২ চা চামচ

কাশ্মিরী লঙ্কা গুঁড়ো – ২ চা চামচ

পেঁয়াজ বাটা – ২ টেবিল চামচ

নুন – পরিমাণমত

কাজু বাটা – ২ চামচ

শুকনো ময়দা – পরিমাণমত

গরমমশলা গুঁড়ো – ১ চামচ

প্রণালী- প্রথমে চিকেন কিমাটা, পেঁইয়াজ, রসুন ও আদাবাটা, টকদই, ধনেগুঁড়ো, নুন ও দুপ্রকার লঙ্কাগুঁড়ো দিয়ে ভাল করে মেখে আধ ঘন্টা রাখতে হবে।

কড়াইতে ৩-৪ চামচ সাদা তেল গরম করে, তাতে এই কিমাটা দিয়ে দিতে হবে। ভাল করে নাড়াচাড়া করে মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। ২ মিনিট ঢাকা চাপা রাখতে হবে। ঢাকনা খুলে, জল শুকিয়ে আসলে, কিমাটা একটু ঝরঝরে হলে, কাজুবাটা দিয়ে ও শুকনো ময়দা অল্প ছড়িয়ে পুরো ঝরঝরে করে গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিতে হবে। তৈরী হয়ে গেল কচুরির পুর। একটু ঠান্ডা করতে হবে।

এবার ময়দাতে নুন, চিনি ও ৪ টেবিল চামচ সাদা তেলের ময়ান ভালভাবে মিশিয়ে, ফেটানো ডিমটা অল্প অল্প করে মেশাতে হবে। সঙ্গে অল্প অল্প জল দিতে দিতে ময়দাটা ভালভাবে মেখে নিতে হবে। মিনিট ১৫ চাপা দিয়ে রেখে, ভালভাবে ঠেসে মেখে নিতে হবে। ৫-৬টা মত লেচি হবে। এবার একটা লেচি নিয়ে, হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে ছোট বাটির খোলের মত করে, ভিতরে শুকনো ময়দা লাগিয়ে, এক-দেড় চামচ কিমার পুর দিয়ে চেপে, ভরে সাবধানে কচুরির মুখটা বন্ধ করে, হাতের তালু দিয়ে চেপে, থালায় রেখে, লেচিগুলোকে হাতের চাপে আর একটু বড় করে, শুকনো ময়দা ছড়িয়ে, হালকা হাতে মোটা করে বেলে নিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে নিতে হবে।

তৈরী হয়ে গেল চিকেন কিমার কাস্তা কচুরি, এবার পছন্দমতো সস বা আচারের সাথে জমে যাবে।

 

বাটি চচ্চড়ি

সুতপা ভট্টাচার্য

chingri-machher-bati-chochchori-photo-2

উপকরণ– ছোট চিংড়ি মাছ ২০০ গ্রাম, ২ টি বড় পেঁয়াজ মিহি কুচোনো, ছোটো ডুমো করে কাটা আলু, রসুন কুচি- এক চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো এক চা চামচ, লঙ্কার গুঁড়ো -আধা চা চামচ, তিন চারটে চেরা কাঁচা লঙ্কা, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, সরষের তেল – তিন টেবল চামচ, টমেটো কুচি ইচ্ছে হলে ব্যবহার করতে পারেন! উক্ত রান্নায় টমেটো ব্যবহার করা হয় নি।

পদ্ধতি– একটা ভারী সসপ্যানে সমস্ত উপকরণ একসাথে মেখে জল দিন! জল এমনভাবে দেবেন যাতে মাছ ও আলু ডুবে থাকে! গ্যাস বা উনুনের আঁচ কম থাকে এমন অবস্থায় বসাবেন! বসিয়ে একটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেবেন। মাইক্রোওয়েভেও করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে অত জল না দিলেও হবে। খুব ঢিমে আঁচে ধীরে ধীরে জল শুকোবে। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে নেড়েচেড়ে দেবেন। জল শুকিয়ে মাখা মাখা হলে নামিয়ে নিন।

পুরাতনী

ব্রততী মজুমদার

puratonipuratoni2

 

আমি আজ যে খাবারের পদটি পরিবেশন করছি, সেটা হয়তো খুবই সাধারন পাঠকদের কাছে। কিন্তূ আমার কাছে যে অসাধারন কারন ৺মায়ের কাছে শূনেছি এটা তার দিদিমা ৺গোপালমার খুব পছন্দের খাবার ছিল – ছাতুর ভুরিয়া

উপকরনঃ

ছাতু ২৫০গ্রাম

ময়দা ২৫০গ্রাম

গাওয়া ঘি ১৫০গ্রাম

নুন এক চামচ

চিনি ১/২ চামচ

লঙ্কার গুড়ো এক চামচ

ভাজা জিরে গুড়ো দুই চামচ

পাতিলেবুর রস একটি

প্রনালীঃ

প্রথমে পুর টা তৈরী করতে হবে। ছাতুর সঙ্গে স্বাদ মতো লঙ্কার গুড়ো, নুন, চিনি, পাতিলেবুর রস, জিরে ভাজার গুড়ো, এক চা চামচ ঘি দিয়ে জল দিয়ে মাখতে হবে।

তারপর ময়দায় নুন, ময়ান (ঘি) দিয়ে মেখে কয়েকটা গোলাকার লেচি কেটে রাখতে হবে। এই লেচির মধ্যে আন্দাজমত ছাতুর পুর দিয়ে বেলতে হবে। চাটুতে এপিঠ ওপিঠ সেঁকে  একটু ঘি দিয়ে তুলে নিতে হবে নরম থাকতে থাকতে। এটা শুধু আচার দিয়ে অথবা আলুর সাদা হিং এর তরকারীর সাথে খাওয়া যেতে পারে।

A Misplaced Idiom

Madhab Chattopadhyay

My father was born at a village named Hetampur in the district of Birbhum in West Bengal. Later on, he migrated to a place near Delhi called Hathras, where his father was working as a headmaster in a local school. Being brought-up in a Hindi-speaking environment, my father learnt the language very well. His vocabulary in Hindi was highly appreciated even by those whose mother tongue was Hindi. It was the medium of education for him and he answered the test papers of various subjects (history, geography) in Hindi during his Matriculation Examination.

When he moved to Kolkata after getting employment, he got a house constructed at Chandernagore in Hooghly district of West Bengal, where my maternal grandfathers and maternal uncles resided through generations. It was a French colony during the British rule in India. Hence a lot of encouragement was provided to learn French. It was not surprising therefore that some eminent French scholars who hailed from that small town, got established in highly honourable academic positions in various parts of France and India. High academic standards were also maintained in the teaching of other languages like Bengali, English and Sanskrit. But Hindi was an out-of-the way language there. My father had no problem in speaking Bengali. However, the admixture of various Hindi words in his vocabulary like ‘tu’ (you) or ‘kom-se-kom’ (at least) drew the attention of rickshaw-pullers, shopkeepers and others with whom he interacted. Aware of his weakness in Bengali, he tried to compensate it by introducing idioms from time to time. But since his childhood was not spent in a Bengali-speaking environment, he was not well versed with the exact connotations of all the idiomatic expressions in Bengali and his attempt to improve his expression most often landed him in embarrassing situations. Let me highlight an example here.

The marriage of my sister was finalised in March 1975 with a professor. During the hectic search for a match for her, my parents made earnest requests to many people to look for a suitable bachelor. One evening, a gentleman visited our house with the details of a prospective bridegroom. My father first thanked him and then informed him that he had already finalised my sister’s marriage. “It is indeed a very good news” said the visitor “Now I have a look for a match for my daughter”. My father wanted to encourage him by saying that he was a capable person and hence he had nothing to worry over the issue. But instead of saying it in plain Bengali, he chose to emphasize his point with an idiom by saying “Why are you worrying? After all, you are a ghughu”. The word in italics literally means dove (the bird) but figuratively means a cunning and shrewd person. My father, to the best of his belief and knowledge had thought he had “glorified” the visitor with this expression. Hence he was highly surprised to note that instead of being grateful for the “appreciation“, the gentleman was taken aback and looked stunned. He left in a short while after exchanging some pleasantries. The moment he stepped out of our house, my mother started admonishing my father for his faux pas. He was trying to defend himself by elaborating what he wanted to mean. But when my mother explained to him the actual meaning of the word, his feelings of shame and guilt knew no bounds. This incident led to a drastic cut down in the use of idioms in his future conversations.

মীরাট বিভ্রাট

নীতা মণ্ডল

রুটিন কাজ থেকে আজ ছুটি। পরীক্ষা নিতে যেতে হবে মিরাট। বহিরাগত পরীক্ষক অর্থাৎ অতিথি হিসেবে। একাজে আর কিছু না জুটুক, নতুন জামাইয়ের মত খাতিরটুকু জোটে। নতুন জামাই সময়ে পৌঁছতে না পারলে কেউ কখনও রাগ করেছে বলে শুনি নি। তাই আমিও গড়িমসি করার সুবর্ণ সুযোগটিকে হাতছাড়া করতে নারাজ। যেহেতু ‘জামাই আদর’ বস্তুটি এ জীবনে জোটার কোনও সম্ভবনা নেই, তাই ‘দুধের স্বাদ ঘোলে’ মেটাতে আমি বদ্ধপরিকর। ঘোল খাওয়ার আনন্দে ঘর থেকে বের হতেই ঘণ্টা খানেক দেরি হয়ে গেল।

দেরি হওয়ার যথেষ্ট কারন আছে। কাজের তো শেষ নেই। অজানা জায়গায় যাব, তার একটা প্রস্তুতি লাগবে না! মোবাইল ফোনে ফুল চার্জ দিতে হয়েছে। এ বাজারে একটা ফোননম্বরে ভরসা নেই, তাই ওদের কাছ থেকে একাধিক লোকের নম্বর নিতে হয়েছে। ফোনে আড্ডা মারতে গিয়ে মোক্ষম সময়ে ব্যালেন্স ফুরিয়ে যায়। কতবার যে বিপদে পড়েও ব্যালেন্স অভাবে লোক ডাকতে পারি নি হিসেব নেই। তাই আটঘাট বেঁধে নামতে হয়েছে। অনেকটা রাস্তা, সময়টাও কাটাতে হবে! যাবার সময় নাহয় রাস্তা দেখতে দেখতে যাব। ফেরার পথে? তাই পছন্দসই একটা গল্পের বই ভরে নিয়েছি ব্যাগে।

বাস হাইওয়ে ধরে এগিয়ে চলেছে। আমিও জানলার ধারে জায়গা পেয়ে মনে মনে ডানা মেলে দিয়েছি। হঠাৎ সম্বিৎ ফিরেই দেখি, মোদিনগর। ‘আরে এরপরই তো মিরাট!’ ওরা বলেছিল মোদিনগরে পৌঁছেই ফোন করে দিতে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি পাঠাবে, আমাকে বাসস্টপে অপেক্ষা করতে হবে না। তড়িঘড়ি ফোন বের করলাম। ওপ্রান্ত থেকে হিন্দি এবং ইংরাজিতে একটা যান্ত্রিক গলা জানাল, এই সুবিধাটি আমার ফোনে অপ্রতুল। ‘যত্তসব ঢং!’ ভেবে বিরক্ত মুখে অন্য নম্বর টিপলাম। আবারও যন্ত্রখানি দু দুটো ভাষায় একই তথ্য পরিবেশন করল। ‘উঃ এদের পাকামির চোটে পারা যায় না!’ ভেবে ফোনের লাল বোতামে এমন জোরে চাপ দিলাম যে একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। ভাবলাম, ভাল হয়েছে। বন্ধ করে চালু করলে অনেক সময় যন্ত্র ঠিকঠাক চলে। বাস মোদিনগর ছাড়ল। ফোন চালু করে ক্রমাগত চেষ্টা করতে লাগলাম দুটো নম্বরে। প্রতিবার একই যন্ত্রবানী ভেসে এল। নেটওয়ার্কের মুণ্ডপাত করতে করতে যখন আমি গলদঘর্ম, তখনই চোখে পড়ল, স্ক্রিনের মাথায় ইংরাজিতে বড়হাতের ‘আর’ অক্ষরটি জ্বলজ্বল করছে। অর্থাৎ, ফোন রোমিং। এই সম্ভবনা তো মাথায় আসে নি। আমার ফোনে যা ব্যালেন্স, তা একটা বিশেষ স্কিমের। রোমিং অবস্থায় ফোন করা যাবে না। মানুষ কখন নিজেকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়, তা উপলব্ধি করছি। তবে সেই উপলব্ধিতে বিশেষ লাভ নেই, বাস মিরাট ঢুকে পড়েছে। এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি সামনের সিটে কন্ডাক্টর তার মোবাইলে একটি খেলায় মজে আছে। মুখখানা কাঁচুমাচু করে আমার আশু বিপদের বিবরণ দিয়ে ওর ফোনখানা হাতিয়ে কাজ সাড়লাম।

বাসস্টপে পৌঁছেই খোঁজ খোঁজ। সবার আগে ফোন রিচার্জ। ড্রাইভারের নম্বর নেব ভেবে আবার যোগাযোগ করলাম।

ওদিকে গম্ভীর গলা, ‘আপনাকে কখন থেকে চেষ্টা করছি, পাওয়াই যাচ্ছে না। আপনি যে নম্বর থেকে ফোন করলেন সেই নম্বরে অন্য কেউ ফোন ধরছে। সে কিছুই বলতে পারে না।’

আমি আসল ঘটনা চেপে গিয়ে বললাম, ‘নেটওয়ার্কগুলো সব ভূতুড়ে, আর যত ঝামেলা আমাদের!’

‘যা বলেছেন। আপনি ওখানেই অপেক্ষা করুন। গাড়ি যাচ্ছে, আধ ঘন্টা লাগবে।’

যখন অপেক্ষা করতে হয়, তখন আধ মিনিটই যে কত লম্বা! এখন আবার আধ ঘন্টার ধাক্কা!

একটা করে গাড়ি আসে। থামে ঠিক আমার সামনাসামনি। আমিও গাড়ির ভেতর সন্ধানী দৃষ্টি হানি। ঠোঁটের কোণায় টেনে আনি রহস্যময় হাসি। চোখের কোণায় ফুটিয়ে তুলি মৃদু ইশারা, ‘এই তো আমি এইখানে’। দেখি, ড্রাইভার ফোন বের করছে। আকুল হয়ে তাকিয়ে থাকি আমার ফোনের স্ক্রিনে। এই বুঝি ফুটে উঠল নম্বর, এই বুঝি বাজল শ্যামের বাঁশি! কিন্তু সে গুড়ে বালি। ড্রাইভার তার কাঙ্খিত মানুষটিকে পেয়ে পাশে বসিয়ে আমার নাকের ডগা দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে যায়।

হঠাৎ আমার চেতনা হয়, এরকম ভরদুপুরে বাসস্যান্ডের মাথায় ভদ্র পোশাক পরে চোখে ইশারা, মুখে রহস্যময় হাসি! ছিঃ ছিঃ, লোকে কি ভাবছে! আপনমনে ধিক্কার দিতে দিতে লজ্জায় সেই স্থানটাকেই ত্যাগ করি। অমনি বেজে উঠে মোহনবাঁশি, ‘আপনি কোথায়? যেখানে বলেছিলেন, খুঁজে পাচ্ছি না।’ ।

ড্রাইভার চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে। একজন মাস্টারমশাইও সঙ্গে এসেছেন। আমি বহিরাগত হলে উনি অন্তর্গত পরীক্ষক। খানিকটা আমি বরকর্তা আর উনি কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা। তাই উনিই আলাপ শুরু করলেন। ঐতিহাসিক আলাপ। সিপাহী বিদ্রোহ দিয়ে শুরু হল। পুরাণ বা ধর্মও বাদ গেল না। বর্ণিত হল এখানকার কালীমন্দিরের মাহাত্ন্য। শুনে বললাম, ‘একটা উইকএন্ডে এসে ঘুরে যেতে হবে তো!’

গন্তব্যে পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে গেল। কালবিলম্ব না করে কাজের কথা পাড়লাম। পরীক্ষার্থী অবশ্য বেশি নয়, মোটে চারজন। সোজা কনফারেন্স রুমে হাজির আমরা। পরীক্ষা চলছে, আতিথেয়তাও চলছে। জল, ফলের রস, চা এবং তার সঙ্গে ‘টা’ একের পর এক ঢুকছে। নৈবিদ্যে উপচে পড়ছে সামনের জায়গাটুকু। আমি কোনটায় একটা ছোট্ট চুমুক দিয়ে নামিয়ে রাখছি, কোনটা অবহেলায় ঠেলে দিচ্ছি।

তিন নম্বর পরীক্ষার্থী উঠেছে ডায়াসে। সাদা বোর্ডে স্লাইডের পর স্লাইড ভেসে উঠছে। কিন্তু পরীক্ষার্থীর মুখে বাক্যি নাই। সে থর থর করে কাঁপছে। অন্তর্গত শিক্ষকের দিকে তাকাতেই তিনি বললেন, ‘নার্ভাস ব্রেকডাউন ম্যাডাম। আসলে ভাল ছাত্রী তো, তাই পরীক্ষার নামেই ভয় পায়।’

নৈবিদ্যের মাঝখান থেকে এক গ্লাস ফলের রস এগিয়ে দিয়ে বললাম, ‘খেয়ে আগে ঠান্ডা হও। তারপর বল। বলতে তো হবেই। নাহলে আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন হলে নম্বর দিতে পারব না। তখন বুঝবে মজা।’

কথাটায় ওষুধের মত কাজ হল।

ঘণ্টা চারেক পর আবার বসলাম ওই গাড়িতেই। সেই একই ড্রাইভার। অন্তর্গত শিক্ষক আর সঙ্গ দিতে আসেন নি। আসবেনই বা কেন, কন্যাদায় থেকে উদ্ধার পেয়ে গিয়েছেন যে! কলেজের গেট পেরিয়ে ড্রাইভারবাবু শুধলেন, ‘এতক্ষণ লাগল যে! কজন ছিল?’

এই লোকটা আসার সময় একটাও কথা বলে নি। ভেবেছিলাম ফেরার পথে আমাকে বোবার মত যেতে হবে। তা হল না দেখে মনে মনে খুশি হলাম। বললাম ‘চারজন।’

‘এতক্ষণ লাগিয়ে দিলেন চারজনের পেছনে?’

আমি কৈফিয়ত দেবার মত বললাম, ‘কি করি বলুন? চারঘণ্টাতেও আসলে হয় না। ওরা একবছর ধরে প্রোজেক্ট করেছে। সেই থিসিস পাঁচ মিনিটে বিচার করা যায়?’

বলল, ‘তাড়াতাড়ি করতে পারলে মঙ্গল পান্ডে খ্যাত কালীবাড়িটা দেখিয়ে দিতাম। তারপর ধরুন হস্তিনাপুর…’

‘হস্তিনাপুর? মানে মহাভারত, কুরুরাজসভা? পিতামহ ভীষ্ম …কোথায় … কতদূর?’ আমি উত্তেজনায় কয়েক ইঞ্চি লাফিয়ে উঠেই ধপাস করে বসে পড়ি।

ড্রাইভার ধীরেসুস্থে পেশাদার ট্যুর গাইডের ঢঙে উত্তর দেয়, ‘মাত্র কুড়ি কিলোমিটার। যেতে আধঘন্টা, আসতে আধঘণ্টা। তাছাড়া আরও একটা জিনিস দেখাতাম। ওই যে হিন্দি সিনেমার নায়িকা, পুরনো অবশ্য… ইস, কি যেন নাম… ওই যে ম্যাডাম, যে হল গিয়ে দাউদ ইব্রাহিমের গার্লফ্রেন্ড। নামটা পেটে আসছে মুখে আসছে না। তার বাংলো আছে এখানে।’

হিন্দি সিনেমা সম্পর্কে আমার যা জ্ঞান তাতে মুখ না খোলাই মঙ্গল। পুরনোদিনের হলে তো, সোনায় সোহাগা। কিন্তু এই লোকটা তো সেসব জানে না। তাই চালাক চালাক গলায় বললাম, ‘আমারও নামটা গলার কাছে এসে আটকে গিয়েছে, মুখে আসছে না। ছেড়ে দাও। একটু পর মনে পড়ে যাবে। তোমার কবে ছুটি থাকে বল। আমরা সেদিন আসব। ঘুরিয়ে দেবে তো?’

‘ঘোরাব না মানে? ওটাই তো আমার ব্যবসা। পারটাইমে এই ড্রাইভারীর কাজ করি। কিছু এক্সট্রা কামাই।’

নিজের সম্পর্কে তথ্যটুকু দিয়েই আমাকে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। একটু আগে আমি যে কাজ করে এসেছি যেন তার শোধ তুলেই ছাড়বেন। আমার কোথায় বাড়ি, স্বামী কি করে, ছেলেমেয়ে কজন, তারা কত বড়, কটাকা ঘর ভাড়া দিই, কটাকা মাইনে পাই, আমার স্বামী কত পান!

শেষ দুটো প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তোতলাতে তোতলাতে আমি প্রায় ধরাশায়ী। নার্ভাস ব্রেকডাউন হবে হবে এমন অবস্থায় তিনি প্রশ্ন থেকে মুক্তি দিলেন। শুরু করলেন উপদেশ বর্ষণ। ঠিক যেমন আমরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে করে থাকি।

‘ওইসব নয়ডা ফয়ডা ছেড়ে চলে আসুন ম্যাডাম। এখানে খরচ কম। ছেলের ভর্তি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ঘরভাড়াও দিতে হবে না। আমাকে তিরিশ লাখ দেবেন, ভাল ফ্ল্যাট যোগাড় করে দেব। আমার রেট টু পার্সেন্ট। তবে আপনার কাছে চাইব না, যা দেবেন খুশি হয়ে…। তারপর জমান না যত খুশি। আপনারা বেড়াতে ভালবাসেন, সেও সস্তায় হয়ে যাবে। দেড়শ কিলোমিটার গেলেই তো হরিদ্বার।’

উপদেশে ঝুলি ভরতে ভরতে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলাম। ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ড্রাইভারবাবু বললেন, ‘রবিবার দেখে চলে আসুন, ঘুরিয়ে দেব। আর আপনার একটা কার্ড দিন।’

বললাম, ‘আমার তো কার্ড নেই।’

‘তাহলে ফোন নম্বরটা দিন।’

আমাকে ব্যাগ ঘাঁটতে দেখে বলল, ‘কাগজ পেন লাগবে না, আপনি বলুন আমি সেভ করে নিচ্ছি।’

বাসে বসতেই ফোন বেজে উঠল। অচেনা নম্বর। ‘চিনতে পারছেন? আমি ঋষিপাল, ড্রাইভার। আরাম করে বসেছেন তো!’

বললাম, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। চিন্তা কর না।’

‘আসবেন কিন্তু আমি ঘুরিয়ে দেব। শুধু তেলের দাম দিলেই হবে।’

বসার জায়গা পেয়েছি কন্ডাক্টরের পাশেই। ঋষিপালের বাচালতার কথা ভেবে নিজেকে সাবধান করেছি, আর কোনও বকবকানি নয়। তাই কালবিলম্ব না করে গল্পের বইয়ে মন দিয়েছি। পেছন থেকে টিকিট কাটতে কাটতে একটা সময় এসে পাশে বসল ছেলেটি। টাকা বের করে এগিয়ে দিতেই জিজ্ঞেস করল, ‘কোন কলেজে পড়? এত দূর থেকে রোজ আসা যাওয়া কর নাকি?’

‘আমাকে এখনও ছাত্রী মনে হয়! আহা কি আনন্দ!’

একটু আগেই ঋষিপালের কথা ভেবে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর কোনদিন অচেনা লোককে প্রশ্রয় দেব না। নিমেষে সে প্রতিজ্ঞা ধুলোয় মিশে গেল। নিজেকে ধিক্কার দিলাম, ‘ছিঃ ছিঃ, সবাই কি খারাপ হয়? যাবার সময় ওই বাসের কন্ডাকটর নিজের ফোনটা দিয়ে আমার কত বড় উপকার করেছিল!’

‘আমি পড়ি না ভাই, পড়াই। এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম।’ বলেই আবার বইয়ে মন দিলাম।

হঠাৎই ছেলেটা জিজ্ঞেস করল, ‘এটা কি ভাষা? আপনার বাড়ি কোথায়?’

বললাম, ‘ভাষাটা বাংলা। আর, আমার বাড়ি কলকাতা।’

‘ভালোবাসি।’

‘মানে?’ আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।

‘আমি এই একটা বাংলাই জানি। আমার কানপুরের ভাবী শিখিয়ে দিয়েছে।’ গর্বিত ভঙ্গীতে জানায় ছেলেটি।

‘কিন্তু ওটা যাকে তাকে বলতে নেই।’

‘কেন? এর মানে তো ক্যায়সে হো? সব সহি সালামাৎ?’

‘তুমি যেটা বলতে চাইছ তাকে বাংলায় বলে, ভাল আছ?’

‘তাহলে আমি যেটা বললাম তার মানে?’

আমি এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে হাত জোর করে পরিষ্কার বাংলায় বললাম, ‘ক্ষমা কর ভাই। আমি কোনও মানে টানে বোঝাতে পারব না। আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি নির্ঘাত ঋষিপালের ভাই শিশুপাল।’

ছেলেটা হাঁ করে কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়েই হিন্দিতে চেঁচিয়ে উঠল, ‘থাম থাম। ম্যাডামের স্টপ এসে গিয়েছে, নামিয়ে দাও।’

ঝুপ করে নেমেই ইচ্ছে হল একটু কাঁদি। মুক্তির আনন্দে কান্না। কিন্তু তখনও একটা আবিষ্কার বাকি ছিল। চারিদিকে তাকিয়ে বুঝলাম জায়গাটা অচেনা, ছেলেটা আমার বাংলার এই মানে করেছে!

বোকার মত দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় মধুসূদন হয়ে দেখা দিল একজন অটোওয়ালা, ‘বসুন্ধরা, বৈশালী, নয়ডা, কোথায় যাবেন? বসে পড়ুন।’

বসেই পড়লাম।

জানতে ইচ্ছে করছে তো, সেই মধুসূদনের সঙ্গে সময়টুকু কেমন কাটল?

থাক, সে গল্প নাহয় আর একদিন হবে।