নির্মাল্য সেনগুপ্ত
১)
খুব আনাড়ির হাতে ক্যামেরা ধরিয়ে দিলে ফোকাস ইন করার সময় যেমন ব্লারড ইমেজ পাওয়া যায় তেমনভাবে খোলা দরজার আলোটা দেখতে পেলেন অরুণবাবু। আর মিনিট তিনেক। তারপর সব জল্পনার অবসান। অদূরে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষ্যে। ভয় এবং চাপা উৎকণ্ঠার মধ্যে সিঁড়ির হাতল ধরে এগোলেন তিনি। এইবার, এইবার সমস্ত রহস্যের উন্মোচন ঘটবে। নয় তিনি মানব সভ্যতার ধারাকে এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে চলে যাবেন, নয়ত তাঁর আর অস্তিত্বই থাকবেনা। ভীতির পরিমাণ কম নয়, কিন্তু প্রত্যেক অতিমানবদেরকেই উন্নতির স্বার্থে এমন কাজ করতে হয়েছে যাতে মৃত্যুভয় প্রবল ছিল। দাঁতে দাঁত চিপলেন অরুণবাবু। ‘প্রায় অন্ধকার’ সিঁড়ি থেকে তিনি আলোর গভীরে প্রবেশ করলেন।
ঊনত্রিশ দিন আগের কথা…
অরুণবাবুর বয়স মেরেকেটে বাহান্ন হবে। অল্প বয়স থেকে ‘কম মায়না কাম খাটুনি বেশি’র চাকরী এবং অবিবাহিত হওয়ার জন্য অত্যাধিক পরিশ্রমের ফলে বার্ধক্যের ছাপ বেশ কিছু বছর আগেই চলে এসেছে। রাজবল্লভ পাড়ার বাসিন্দা অরুণলাল মহালনবীশের সঙ্গে বাকি বাসিন্দাদের যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। অরুণবাবু একটি জীবনবীমা কোম্পানির এজেন্ট। ওয়ান রুম ফ্ল্যাটে থাকেন। যা মাইনে পান তাতে একজনেরই চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়। তাই শখ আহ্লাদ, আমোদ, বছরে একবার ঘুরতে যাওয়া, সপ্তাহান্তে মদ্যপান, পাড়ার মোড়ের পান-সিগারেটের দোকানে মাসিক খাতা ইত্যাদি প্রায় সমস্ত বাঙালীদের স্বাভাবিক বিষয়গুলো থেকে তিনি বঞ্চিত। তাতে তাঁর দুঃখ করার মতন বিলাসীতাও নেই। তিনি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সস্তার রেজর দিয়ে দাড়ি কামিয়ে অফিসে যান। যাতায়াতে লোকাল ট্রেনে কমলা লেবু বা ঝাল বাদাম কিনে খান। ভেন্ডারে উঠে বাকি অফিস যাত্রীদের তাস খেলা দেখে প্রাণপণে শেখার চেষ্টা করেন। সারাদিন এর ওর বাড়ি প্রিমিয়ামের টাকা তুলতে বা নতুন ক্লায়েন্টদের ‘জীবনবিমা যে কতটা প্রয়োজন’ বোঝাতে সময় কেটে যায়। বাড়ি ফিরে এসে স্নান করে রাতের খাবার খেয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েন।
সেদিন সকালবেলা ঘরে অফিস যাওয়ার সময় অরুণবাবু ফ্ল্যাটের মেইন গেটে তালা লাগাচ্ছিলেন। একটি দম্পতি রিকশায় চেপে পাশের ফ্ল্যাটে এসে দাঁড়াল। ছেলেটির বয়স সাতাশ আটাশ। মেয়েটি ছাব্বিশের ঘরে হবে। সেদিকে তাকিয়ে অরুণবাবুর মন অল্প বিষণ্ণ হয়ে গেল। আর কিছু না হোক, একজন সহধর্মিণীর অভাব সবসময় টের পান তিনি। মাখো মাখো প্রেমের প্রয়োজন ছিলনা, অন্তত মুখ ঝামটা দেওয়ার জন্যও যদি কেউ থাকত, রান্নাটা নিজেকে করতে হতনা, সকালের শার্টটা ঘুম থেকে উঠে ইস্ত্রী করা পাওয়া যেত, ঘুমোনোর আগে কারও কপালে চুমু খেয়ে আদর করতে করতে ঘুমনো যেত একটু।
এসব ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তালার ফুটোয় চাবিটা সেট হচ্ছিলনা ঠিক করে। এমন সময় ডাক শুনে তাঁর সম্বিত ফিরল।
“দাদা শুনছেন?”
অরুণবাবু দেখলেন, সদ্য রিকশায় আগত দম্পতির ছেলেটি তাকে ডাকছে।
“অ্যাঁ?”
“বলছি যে, আপনি কি পুরনো বাসিন্দা? খাওয়ার জলের ব্যবস্থা কি করে করা যেতে পারে বলতে পারেন? আমার ওয়াটার পিউরিফায়ারটা কেনা হয়নি।”
“সামনের পরেশের দোকানে মিনারেল ওয়াটারের জারিকেন ভাড়া পাওয়া যায়। পঁয়তাল্লিশ টাকা দাম। একশ টাকা জমা রাখে। নতুন আপনারা?”
“আজ্ঞে হ্যাঁ। আমি থাকব। ও আমার বান্ধবী রনিতা। আমার নাম সুমিত, সুমিত বিশ্বাস।”
ছেলেটি হাত বাড়িয়ে দিল সামনে। অরুণবাবু সেটি ধরে অল্প ঝাঁকালেন।
এরপর প্রায় কুড়ি মিনিট দুজনের মধ্যে কথা হল। অরুণবাবুর ছেলেটিকে বেশ ভাল লাগল। প্রতিবেশী হিসেবে খাসা। এমনিতে তাঁর আজ অবধি কোনও প্রতিবেশীর সঙ্গে সখ্যতা হয়নি।
দুদিন পরে অরুণবাবু সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন। কাজের চাপ কম থাকায় তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেছিল। বাড়িতে ঢোকার সময় সুমিতের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সে এক গাল হাসি দিয়ে বলল, “কী দাদা? এক বোতল বিয়ার হবে নাকি? একদম ঠাণ্ডা…”
অরুণবাবুর চমক লাগল মনে। কোনওদিন এসব ছুঁয়ে দ্যাখেননি। তাঁর বাবা জীবিতদশায় বলতেন, “ওসব বিষ রে অরু। ছুঁয়েছিস কী জ্বলে মরে গেছিস”। কিন্তু অফিসে নিত্য তাঁর কলিগদের মদ্যপানের গল্প শোনেন। আজ হঠাৎ তাঁর মনে অদম্য ইচ্ছে জাগল।
“চল, হয়ে যাক। আমি কিন্তু খাইনা একদমই।”
সুমিতের বেডরুমের খাটের এক কোণায় বসে দ্বিতীয় বোতলের শেষ ফেনা ফেনা অংশটুকু গলায় চালান করে দেওয়ার পর অরুণবাবুর মনে হল বমি হবে, হবেই। তাঁর মনে বহুদিনের জমা আবেগ যেন কণ্ঠনলী দিয়ে ঠেলে বেরোতে চাইছে। তিনি সুমিতকে জড়িয়ে ধরলেন দু হাত দিয়ে।
“ভাল লাগেনা ভাই, কিচ্ছু ভাল লাগেনা। কী আছে বল আমার জীবনে? এই অফিস আর বাড়ি। কিচ্ছু পাইনি আমি। টোটাল ফেলিওর। আমি মরিনা কেন…”
সুমিতেরও চোখ ভিজে আসছিল। সেও দু বোতল খেয়েছে। এমনিতে সে মাতাল হয়না, কিন্তু কেউ এমন ভেউ ভেউ করে কাঁদলে কার না কষ্ট হয়! সে অরুণবাবুর পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, “আরে দাদা, কাঁদবেননা, ভাবুন তো কত লোক রাস্তায় শোয়? তাদের কত কষ্ট?”
এমনভাবেই দুর্দান্ত একটা বন্ধুত্ব তৈরী হল দুজন অসমবয়সী মানুষের মধ্যে। অরুণবাবু জানলেন, সুমিত একজন কেমিস্ট। একটা ফার্মেসীতে চাকরী করে। তার বান্ধবী রনিতা তার অফিস কলিগ। সে পাগলের মত ভালবাসে তাকে। সে বিয়ে করতে ইচ্ছুক কিন্তু রনিতা আর কটাদিন অপেক্ষা করতে চায়। এছাড়া সুমিতের শখ আহ্লাদ সবকিছু হল পুরাণ বা মাইথোলজি। রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়ড-ওডিসি, বাইবেল সবকিছু তার ঠোঁটস্থ। বিভিন্ন দেশের পৌরাণিক কাহিনী জোগাড় করে পড়াই তার সখ। সুমিতের কাছেই তিনি জেনেছেন গ্রীক দেবী অ্যাফ্রোডাইটি আসলে সমুদ্রের ফেনা থেকে জন্ম নেন। ঘটোৎকচের ছেলে বার্বারিকের মৃত্যু কেমনভাবে হয়। শিখণ্ডীর আগের জন্মের নাম অম্বা, যে ভীষ্মর উপর প্রতিশোধ নিতে উভলিঙ্গ হয়ে জন্ম নেয় আবার ইত্যাদি। সুমিত ভীষণ হাসিখুশি এবং সবসময় উজ্জীবিত একটি ছেলে। অফিস আর পুরাণ বাদে যার জীবনের আর একটিই লক্ষ্য, রনিতাকে বিয়ে করা।
এভাবেই চলে গেল দুটো সপ্তাহ। সুমিত আর রনিতার সঙ্গে রেস্টুর্যান্টে খেয়ে এলেন একদিন। কিছু টাকা তাঁর পকেট দিয়েও খসল, কিন্তু তাঁর একঘেয়ে জীবনে যেন এই ছেলে মেয়ে দুটি নতুন হাওয়া নিয়ে এসেছিল হঠাৎ। রনিতা রবিবার সুমিতের সাথে দেখা করতে এলে তাঁর ডাক পড়বেই।
একদিন সপ্তাহান্তে সুমিতের বাড়ি বসে বিয়ার খাচ্ছিলেন দুজনে। আজ সুমিত দুপুর থেকেই একটু চুপচাপ। কারণ জিজ্ঞেস করাতে সুমিত বলল, “ সকালে রনিতার কলেজ জীবনের এক বন্ধুর সাথে আলাপ হল। সেও কেমিস্ট। বিদেশ থেকে পাশ করে এসেছে। অনেকক্ষণ গল্প হল।”
“বাহ, কিন্তু কিছু হয়েছে কি?”
“সে অদ্ভুত একটা গল্প শোনালো আমায়।”
“তাই? কী?”
“আপনি এলিক্সার কাকে বলে জানেন?”
“আমি পলিসি বেচার পদ্ধতির বাইরে খুব কম জিনিসই জানি হে। এই তোমার থেকেই শিখছি আজকাল। সেটা কী বস্তু?”
সুমিত একটু নড়েচড়ে বসে বিয়ারের বোতলে একটা ঢোক মেরে বলল, “ইস্ট এশিয়ান মাইথোলজি অনুযায়ী মুন র্যাবিট এক ধরণের মিষ্টি তরল পানীয় বানায়, যাকে বলে দ্য এলিক্সার অফ লাইফ’ অর্থাৎ হিন্দু পুরাণ মতে যাকে বলা হয় অমৃত। এখন চীনা, জাপানি ছাড়াও ইজিপশিয়ান পুরাণ মতে দেবতা ‘থথ’ যার দেহ মানুষের এবং মাথাটা ইবিসের, সে এক ধরণের তরল পান করত, যার ফলে সে অসীম শক্তি ধারণ করত। কিন্তু পরে থথ হয়ে ওঠে মানসিক রোগী। যাই হোক, রনিতার এই বন্ধু অশোক ইজিপ্টে পিরামিডের কেমিক্যাল সল্যুশন নিয়ে কাজ করতে গেছিল। সেখানে সে নাগ হামাদি লাইব্রেরীতে একজন পুরাতত্ত্ববিদের সাহায্যে একটি প্যাপিরাস কোডিস থেকে এই এলিক্সারের ফর্মুলা পায়। সেটা নিয়েই আজ বলছিল সে।”
এত তত্ত্ব মাথায় রাখতে পারছিলেননা অরুণবাবু। এমনিতেই এক বোতল বিয়ার শেষের দিকে। তাঁর মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করে দিয়েছে। তিনি বললেন, “তা এই নিয়ে তুমি এত চিন্তিত কেন?”
সুমিত বলল, “শুধু এলিক্সার নয়, ডার্ক এলিক্সার নামের আরেকটি জিনিসের সন্ধান পেয়েছে অশোক। যা এর আগে কোনওদিন কোথাও জানা যায়নি। এর ইনগ্রিডিয়েন্টটা সে আমাকে বলল। আমি ভাবছিলাম যদি…”
“কী?”
“যদি আমার ল্যাবে সেটা বানিয়ে দেখি। সে এসব জানলেও বিশ্বাস করেনা কিছু হতে পারে। সে শুধু কৌতুহলে জেনেছে। আমি ভাবছি যদি চেষ্টা করে দেখা যায়…”
“কর কর… তোমার অনেক নাম হোক…” অরুণবাবু খালি বোতলটা রেখে আরেকটা বিয়ারের ভর্তি বোতল হাতে তুলে কাঁপা গলায় বলে উঠলেন, ‘উল্লাস…’
২)
এরপর দিন পাঁচেক সুমিতের দেখা পাওয়া গেলনা। এরপর একদিন রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরলেন অরুণবাবু। মেইন গেটের দিকে এগোতে দেখলেন সুমিত দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এত রাতে?”
“একত্রিশটা জিনিস লেগেছে মোট। অ্যাসিটামিনোফেন, অ্যামিনপাইরিন, অ্যান্টিপাইরিন, ক্যাফেইন…”
“থামো থামো। কী বলছ?”
“ডার্ক এলিক্সার রেডি দাদা। আমি অলরেডি নিয়ে নিয়েছি কিছুটা। আস্তে আস্তে বল পাচ্ছি। দশ দিন টানা নিতে হবে। তারপর…”
অরুণবাবু চমকে গেলেন। এমন কী সত্যি হয়? তাঁর জিনিসটা একবার দেখার ইচ্ছে হল খুব।
“একবার দেখা যাবে ব্যাপারটা?”
সুমিত দুপাশ একবার দেখে নিয়ে বলল, “আজ রাতে না হয় আমার ঘরে থেকে যাবেন। চলুন…”
মিনিট ছয়েকের মধ্যে সুমিতের ঘরে পৌঁছলেন তিনি। সুমিত একটা নীল রঙের ঘঁষা কাঁচের বোতল নিয়ে এল।
“দাদা, রনিতা যেন না জানে…”
অরুণবাবু মাথা নাড়লেন। খুব ঘন তরলটা। কি হতে পারে উনি ব্যবহার করলে?
সুমিত যেন অরুণবাবুর মনের কথা শুনে ফেলে বলল, “আপনার চাই?”
অরুণবাবু থতমত খেয়ে তাকালেন সুমিতের দিকে। “মানে… আমি তো জানিনা… কী থেকে কী হবে…”
“আমি কিন্তু দাদা এটা দুজনের জন্য তৈরী করেছি…”
অরুণবাবু প্রমাদ গুনলেন। সত্যিই কি এমন কোনও গুণ আছে এটায়? সারা জীবন লাঞ্ছনা আর গঞ্জনার জীবন কাটিয়েছেন। প্রথমে বাবার ধ্যাতানি, তারপর স্কুল কলেজে বন্ধুবান্ধবের ইয়ার্কি, অফিসে বস-কলিগের ব্যঙ্গ, একাকীত্বময় জীবন, কতদিন এসব সহ্য করবেন তিনি? আর কতদিন?
সুমিতের দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় অরুণবাবু বললেন, “এটা কিভাবে খাব? এমনি? না জল দিয়ে?”
সুমিতের ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটল। সে একটা ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ নিয়ে এল। এরপর অরুণবাবুর পাঞ্জাবীর হাতাটা গুটিয়ে শিরায় সূঁচ ফুটাল। অরুণবাবু ইষৎ কেঁপে উঠলেন। মাথাটা অল্প ঝিমঝিম করে উঠল, যেমন বিয়ার খেলে হয়। মুখের ভিতরটা তেতো লাগল হঠাৎ খুব।
সুমিত একটা ছোট বোতল আর এক বান্ডিল ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ এনে অরুণবাবুর হাতে দিয়ে বলল, “রোজ সকালে খাওয়ার পর। এবার ভাগ্য। দেখা যাক কী হয়…”
কিছুক্ষণ গল্প করার পর অরুণবাবু ঘুমিয়ে পড়লেন সোফায়।
এরপর কেটে গেল তিনদিন। কিছুই আলাদা টের পাননি তিনি। কিছুই হবেনা শুধু শুধু সুঁচে বিদ্ধ করা নিজেকে। সুমিতের উপর দুর্বলতা তাই নইলে এসব করতেননা তিনি। তার উপর বেশ মাথা ঝিমঝিম করে। বসের সামনে দুবার তুতলে গেছেন আগেরদিন। অরুণবাবু ঠিক করেছেন আর দিন তিনেক দেখবেন, তারপর আর নয়। বোতল আর সিরিঞ্জটা ফেলে দেবেন।
গতকাল সুমিত এসেছিল। ওর উচ্ছাস ভাবটা কম যেন। রনিতার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। মন মেজাজ ভাল নেই। সে এলিক্সার সেবন করছে কিনা আর জিজ্ঞেস করলেননা। বেচারার মনটা খারাপ বেশ। তাঁর প্রেমিকা বা স্ত্রী না হওয়ায় এই জ্বালা থেকে মুক্ত তিনি।
টিফিন খাওয়ার সময় শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছিল বেশ। জিনিসটা নেওয়ার পর থেকেই সারাদিন কেমন ক্লান্ত ভাব লাগে। কিছু ক্ষতি হচ্ছেনা তো? রোগা হচ্ছেন কী? অরুণবাবুর মনে পড়ল তাঁর বাবা বলতেন, শরীরে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে কিনা তা জানবার প্রাথমিক উপায় হল ওজন চেক করা।
অফিসের নিচেই ওষুধের দোকান। অরুণবাবু নেমে এসে সামনের দোকানটায় ঢুকলেন। ডিজিটাল মেশিন। দু টাকা ফেলতে ওজন ফুটে উঠল স্ক্রীনে।
মেশিনটা খারাপ। অরুণবাবু দেখলেন ওজন দেখাচ্ছে চব্বিশ পয়েন্ট পাঁচ। দু টাকা গচ্ছা গেল। বিরক্তিসূচক আওয়াজ বের করে, দোকানীর দিকে একটা অল্প কড়া নজর দিয়ে এগিয়ে গেলেন।
মিনিট দুয়েকের মধ্যে আরেকটা দোকান। এখানেও একই রকম মেশিন। দুটাকা হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন মেশিনে। টাকা ফেলার তিন সেকেন্ড পর ওজন দেখাল। পঁচিশ পয়েন্ট দুই।
অরুণবাবু বুঝলেন খুব বেশি গরম না থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ তিনি দরদর করে ঘামতে শুরু করেছেন।
“দাদা মেশিনটা ঠিক আছে?”
দোকানি একটা অবজ্ঞাময় অভিব্যক্তি দেখিয়ে বলল, “আগের মাসের কেনা। এটাই মার্কেটে লেটেস্ট। হাতিরও এগজ্যাক্ট ওজন দেয় দাদা…”
অরুণবাবু নামলেন। পকেট হাঁতড়িয়ে দেখলেন আরও চারটে দু টাকা খুচরো আছে। একটু দূরে আরেকটা দোকান। সেখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। ওজন এল চব্বিশ পয়েন্ট সাত।
এতগুলো মেশিন খারাপ হতে পারেনা। কি হয়েছে তাঁর!! অরুণবাবু হন্তদন্ত হয়ে ফিরলেন অফিসে। ডেস্ক স্টাফ নিখিলের সামনে এসে বললেন, “দ্যাখো তো নিখিল, আমাকে কী খুব রোগা লাগছে?”
নিখিল একবার তাঁকে আপাদমস্তক দেখে বলল, “কই না তো। বরং একটু মুটিয়েছেন মনে হচ্ছে।”
বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিলেন অরুণবাবু। এটা কী হচ্ছে! তিন চার মাস আগে একবার মেট্রোতে ওজন করেছিলেন। বাষট্টি কেজি দেখিয়েছিল। সেখান থেকে পঁচিশে নামে কী করে! তাঁর তো মরে যাওয়ার কথা! তবে কী ওই এলিক্সারের জন্য…
অরুণবাবুর মনে হল তাঁর নিজেকে বেশ হালকা লাগছে। কাজকর্মও বেশ তাড়াতাড়ি করে ফেলতে পারছেন। তৎপরতা বেড়েছে। শুধু মাথা ঝিমঝিম।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সেদিন রাতে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। হঠাৎ করে একটা কুকুর এসে পড়ল সামনে। আচমকা এসে যাওয়ায় আঁৎকে উঠে একটা ছোট্ট লাফ দিয়ে ফেললেন।
পা যখন মাটি ছুঁল, অরুণবাবু আবিষ্কার করলেন লাফ দেওয়ার আগে এবং পরের জায়গাটার মধ্যে দূরত্ব প্রায় পাঁচ মিটার!
এ কি হচ্ছে! অরুণবাবুর খুব ভয় লাগল। এ সব তো অস্বাভাবিক ব্যাপার। কোনওদিন স্কুল কলেজে লং জাম্পে নাম দেননি তিনি। তাঁর চেহারা বরাবরই ভারীর দিকে। এ সব কী তাহলে এলিক্সারের জন্য?
হঠাৎ খুব ফুর্তি জাগল তাঁর মনে। বেশ কিছুটা ছুটে এসে তিনি লাফ দিলেন।
যখন জমিতে নামলেন, অরুণবাবু বুঝলেন প্রায় ১০ মিটার তিনি শূন্যে ছিলেন।
এরপর অরুণবাবু প্রায় আধ ঘণ্টা লাফিয়ে বেড়ালেন সারা পাড়া।
৩)
পরের দিন খুব সকালে সুমিত এল অরুণবাবুর বাড়িতে। তিনি দেখলেন, সুমিতের দু চোখের নীচে লম্বা কালো ছোপ পড়েছে। হঠাৎ সে অরুণবাবুকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করল।
“আমার কিচ্ছু ভাল লাগছেনা দাদা। রোজ ঝগড়া হচ্ছে রনিতার সাথে। ওই ওষুধটাও কিচ্ছু কাজ করলনা। আমি এভাবে বেঁচে থেকে কী করব বলুন? আমার জীবনে কী একটু শান্তি থাকবেনা?”
অরুণবাবুর এখন এই কান্নাকাটি ভাল লাগছিলনা। তিনি ঠিক করেছেন আজ একটু বেশি পরিমাণে এলিক্সারটা ইনিপুট করবেন। তবু তিনি সুমিতকে সান্ত্বনা দিতে পিঠ চাপড়ে বললেন, “আরে একি? এভাবে ভেঙে পড়ছ কেন? এত ভাল চাকরি কর তুমি। এত হাসিখুশি ছেলে। এমন করতে আছে? ঠিক কাজ করবে। ঝগড়াও হবেনা। রনিতাও এত ভাল মেয়ে। খুব ভাল থাকবে তোমরা…”
সুমিত চোখের জল মুছে বলল, “আপনি কিছু বুঝলেন? কাজ হল কিছু?”
অরুণবাবু ভাবলেন কিছুক্ষণ। এখনই বলা ঠিক হবেনা সুমিতকে। ওঁর কাজ করেছে শুনলে সুমিত আরও ভেঙে পড়তে পারে। সবার ভাগ্য তো আর এক হয়না।
“নাহ্, কিছুই হয়নি। তবে আরো তো ছদিন বাকি। এখনই হতাশ হোওনা। আচ্ছা সুমিত, আজ অফিসে একটু কাজের চাপ আছে। স্নানে যেতে হবে। তাই…”
সুমিত চলে গেল। অরুণবাবু ডার্ক এলিক্সারের বোতলটা হাতে নিলেন। আজ একটু বেশি করে…
সেদিন রাতে অফিস থেকে ফিরে অরুণবাবু চলে গেলেন পাড়ার মাঠে। দশ বারটা কুকুরের চেঁচামেচি পার করে তিনি এসে দাঁড়ালেন এক প্রান্তে। নিস্তব্ধ অন্ধকার মাঠ। কারও আসার সুযোগ নেই এখন।
কিছুটা দৌড়ে এসে লাফ দিলেন তিনি। দেওয়ার সাথে সাথে হাত দুটো দুদিকে ছড়িয়ে গেল তাঁর নিজে থেকে।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর যখন মাটিতে নামলেন, অরুণবাবু বুঝলেন, আর কিছু নয়, গত পাঁচ মিনিট তিনি উড়ে বেড়িয়েছেন সারা মাঠ। হয়তো এই যুগের তিনি প্রথম মানুষ যে পাখির মত উড়ল এতক্ষণ।
রাত তিনটের সময় বাড়ির সামনে ল্যান্ড করলেন তিনি। বলাই বাহুল্য মাঠ থেকে বাড়ির রাস্তাটা তিনি হেঁটে আসেননি।
তিনদিন পর রবিবার এল। সুমিতের খোঁজ নিতে তার বাড়ি গেলেন অরুণবাবু। কলিং বেল টেপার দু মিনিট পর দরজা খুলল।
চমকে গেলেন অরুণবাবু। সুমিতকে চেনা যাচ্ছেনা প্রায়! সারা শরীর যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। গায়ে কালো কালো ছোপ। গাল দুটো ভেঙে যেন একে অপরকে ছুঁতে চাইছে। মাথার চুলের ঘনত্বও কম। চোখ দুটো কোটরের ভিতর ঢুকে গেছে পুরো। বোঝা যাচ্ছে সুমিত কাঁদছিল এতক্ষণ।
“একি অবস্থা হয়েছে তোমার? শরীরের কী হাল বানিয়েছ? এমন করছ কেন তুমি?”
অনেকদিন গরমের পর যেমন হঠাৎ বর্ষা আসে, সেভাবে অঝোরধারে কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়ল সুমিত। অরুণবাবু কিছুতেই সামলাতে পারছিলেননা। সে কী বলছে এক বর্ণও বোঝা যাচ্ছেনা। রনিতার নামটা শোনা যাচ্ছে মাঝে মাঝে। কিছুক্ষণ পর তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ফিরে এলেন সুমিতবাবু। হাসিখুশি ছেলেটা পুরো ধ্বংস হয়ে গেল। কিন্তু এসব এখন তাঁর ভাবার সময় নয়। গতকাল প্রায় এক ঘণ্টা ওড়ার পর তিনি মাটিতে নেমেছেন। কিন্তু এখনও এই উড়ন্ত ব্যাপারটা তাঁর কন্ট্রোলে আসেনি। আর বাকি দুদিন। তারপর ডার্ক এলিক্সার শেষ হয়ে যাবে। তিনি চাননা ওটা শেষ হওয়ার পর তাঁর এই ক্ষমতা চলে যাক। তাই নিত্য প্র্যাকটিস চালাচ্ছেন। মানব সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন হতে চান তিনি।
দশ নম্বর দিন। খুব আনাড়ির হাতে ক্যামেরা ধরিয়ে দিলে ফোকাস ইন করার সময় যেমন ব্লারড ইমেজ পাওয়া যায় তেমনভাবে খোলা দরজার আলোটা দেখতে পেলেন অরুণবাবু। আর মিনিট তিনেক। তারপর সব জল্পনার অবসান। অদূরে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষ্যে। ভয় এবং চাপা উৎকণ্ঠার মধ্যে সিঁড়ির হাতল ধরে এগোলেন তিনি। এইবার, এইবার সমস্ত রহস্যের উন্মোচন ঘটবে। ছাদের দরজার দিকে এগোলেন অরুণবাবু। এলিক্সার শেষ। আজ তিনি ঝাঁপ দেবেন ছ তলার ছাদ থেকে এবং উড়ে বেড়াবেন নিজের ইচ্ছেমত। কেউ আটকাতে পারবেনা তাকে আর। বুকের ভিতর নিশ্বাস প্রশ্বাস পাগলের মত চলাফেরা করছে। মৃত্যুভয় আছে, কিন্তু সমস্ত বৈজ্ঞানিকই জীবনের মায়া তুচ্ছ করে এক্সপেরিমেন্ট করেছে চিরকাল। অদূরে গান বাজছে ‘আমার বেলা যে যায়, সাঁঝবেলাতে…’ পাঁচিলের উপর এক পা দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন অরুণবাবু। নীচে একটা পানা পুকুর। সেখানে একটা বক কুঁচো মাছ ধরে উড়ে গেল আকাশে। অরুণবাবু ঠিক করলেন তিনি ওই বকটাকে পিছু করবেন।
পাশের দিকে তাকালেন তিনি। ঠিক তক্ষুনি পাশের ছাদ থেকে পাঁচিলের উপর একটি শীর্নকায়, প্রায় মাথায় টাক পড়ে যাওয়া সাতাশ আটাশ বছরের ছেলে পাঁচিলের উপর উঠে এসে দাঁড়াল। দুজনে তাকাল একে অপরের দিকে। সুমিত চায়না আর এই জীবন রাখতে। গত কাল চাকরি চলে গেছে তার। রনিতার সাথে সম্পর্কও শেষ করে দিয়েছে সে, রনিতার প্রচুর কাকুতি মনতি সত্ত্বেও।
দুজন অসমবয়সী মানুষ কিছুক্ষণ চেয়ে রইল একে অপরের দিকে। তারপর প্রায় একই সাথে ঝাঁপ মারল।
৪)
সাব ইন্সপেক্টর তথাগত মজুমদারের কাছে ফোনটা এল বেলা বারটার সময়। এমনিই পঁচিশে বৈশাখের জন্য সারা এলাকাময় রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেছিল। বাইরে রোদের তেজও কম নয়। এই সময় ফোন এল, কাছেই একটা বহুতল ফ্ল্যাটের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে একজন আত্মহত্যা করেছে। মাথা ফেটে চৌচির, মাল্টিপল বোন ফ্যাকচার। শিড়দাঁড়াটা ভেঙে বুক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেছে। সেই দেখে লোকে বেমালুম ভির্মি খাচ্ছে। এক্ষুনি স্পটে গিয়ে ভীড় সামলাতে হবে অ্যাম্বুলেন্স আসা অবধি। একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠলেন তথাগতবাবু। মানুষ যে কেন আত্মহত্যা করে…
সাতদিন পরের কথা…
গোয়েন্দা দপ্তরের অভীক ব্যানার্জী ঢুকল আই.জি বিকাশ স্যানালের কেবিনে। এই ছেলেটার প্রতি অগাধ বিশ্বাস বিকাশ সান্যালের। কঠিন থেকে কঠিনতর কেস দুদিনে সমাধান করে দেয় অভীক। তাই আজকেও পজেটিভ কোনও উত্তর চাইছিলেন তিনি।
“কেস অলমোস্ট সলভড স্যার…”
“অ্যাজ ইউজুয়াল অভীক। দ্য ডিপার্টমেন্ট ইজ প্রাউড অফ ইউ। তুমি যেটা সন্দেহ করছিলে সেটাই?”
“হ্যাঁ স্যার। ক্লিন কেস অফ লাভ ট্রায়াঙ্গল। রনিতা নামের মেয়েটি চাইছিল সুমিতের সাথে সম্পর্কটা না রাখতে। এদিকে সুমিত জোর দিচ্ছিল বিয়ের জন্য। এমন অবস্থায় রনিতার প্রেম হয় সায়াকাট্রিস্ট ডক্টর অশোক ভট্টাচার্য্যর সাথে। অশোকও রনিতার প্রেমে পাগল হয়ে যায়। অশোক শোনে সুমিতের অদম্য কৌতূহল মাইথোলজিতে। তখন সে প্ল্যান করে যেমন করে হোক সুমিতকে কিছু করে সরিয়ে দিতে হবে রনিতার জীবন থেকে। সে রনিতার বন্ধু সেজে দেখা করে সুমিতের সাথে এবং কোনও গল্পের মাধ্যমে সুমিতকে রেসিপি দেয় ডি.এম.টি এবং হেরোইন এর এক কম্বিনেশনের। সে জানত সুমিত কেমিস্ট। তার এর ইনগ্রিডিয়েন্ট জোগাড় করতে অসুবিধে হবেনা। হাইলি ডিপ্রেসিভ স্কিজোফ্রেনিয়ার সৃষ্টি করে এই ড্রাগ সেবন। সে এই গল্পটা এমনভাবেই ফাঁদে যাতে একটা ভাল পরিমাণ ওষুধ সুমিত ব্যবহার করে প্রতিদিন। প্রায় ২৫ গ্রাম মাদক পাওয়া গেছে সুমিতের দেহে। এর থেকে পজেটিভ স্কিজোফ্রেনিয়া হওয়ারও একটা মাইল্ড চান্স থাকে কিন্তু তা এক লাখে একটা। তার প্ল্যান অনুযায়ীই সে এই মাদক সেবন করে এবং মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। তবে স্যার এক্ষেত্রে অশোকবাবুর এগেইন্সটে কদ্দুর অ্যাকশন নেওয়া যাবে বলতে পারছিনা। ম্যাক্স টু ম্যাক্স লাইসেন্স ক্যানসেল করানো যেতে পারে। কিন্তু এরা হাই প্রোফাইল লোক, ভাল উকিল লাগিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে অনায়াসে…”
বিকাশ সান্যাল কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে থাকলেন। তারপর বললেন, “হুমম, আর ওই ভদ্রলোক? সুমিতের পাশের বাড়ির অরুণবাবু? তিনি নিখোঁজ হলেন কেন সুমিতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পর?”
অভীক ব্যানার্জী একটু মাথা চুলকে ইতস্তত করে বলল, “এই জায়গাটাই আনসলভড স্যার। ওই ভদ্রলোকও একই ড্রাগ নিচ্ছিলেন সুমিতের সাথেই। ওর বাড়িতেও সিরিঞ্জ এবং কন্টেইনার পাওয়া গেছে। কিন্তু তিনি যে কোথায় গেলেন! আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। এনার মাথারও প্রবলেম দেখা দিয়েছিল। ওর অফিসের এক কলিগ নিখিল দাসকে অদ্ভুত গল্প শোনাচ্ছিলেন ইদানীং…”
“কী গল্প?”
“কিসব উনি নাকি উড়তে পারেন। মানব সভ্যতার কল্যাণে সে বিদ্যা লাগাবেন। এই সব পাগলের বুক্নি।”
“কিন্তু তিনি নিরুদ্দেশ হলেন কেন? খোঁজ নাও। হয়ত কেসটা এতটা সোজা না যতটা তুমি ভাবছ।”
অভীক মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। বিকাশ সান্যাল ভাবতে শুরু করছিলেন অরুণবাবুর নিরুদ্দেশের কারণ। তবে কী আরও জটিল কোনও বিষয়? লাভ ট্রায়াঙ্গলের বাইরে বেরিয়ে কিছু? উড়তে পারার বিদ্যাটার রহস্যটা কি???
যদিও কিচ্ছুক্ষণ পরেই একটা ফোন তাঁর চিন্তার অবসান ঘটাল। বিকাশ সান্যাল জানতে জানতে পারলেন, সুমিতের ফ্ল্যাটের সামনের পানা পুকুর থেকে একটা লাশ উদ্ধার হয়েছে এক্ষুনি। ফুলে ফেঁপে একসা কাণ্ড। পাড়ার লোকেরা লাশ সনাক্ত করেছে। অরুণলাল মহালনবীশ, যার উড়ান শেষ হয়েছিল পুকুরের জলের নীচে…