বেলা দাস
আমি বেলা দাস।
বর্তমানে আমার বয়স ৭৬ বছর। আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ১৯৬১ সালে সংস্কৃতে বেদান্ত গ্রুপ নিয়ে ১৯৬৩ সালে পাশ করি। আমার স্বর্গত বাবা বরাবরই পড়াশোনা খুব ভালোবাসতেন।
আমরা ছয় বোন আর দুই ভাই। বাবা প্রত্যেককে ভালোভাবে পড়াশোনা করিয়ে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। আমি হরিনাভি গ্রামে মেয়েদের স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করি।স্কুলের নাম সুভাষিণী বালিকা শিক্ষালয়। তখন ঐ স্কুল অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছিল। কাজেই আমাকে পাশের গ্রামের পদ্মমণি বালিকা বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেনীতে পড়ে স্কুল ফাইনাল পাশ করতে হয়। তখন সেটা ১৯৫৭ সাল। তারপর গড়িয়ায় দীনবন্ধু কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করি ১৯৫৯ সালে। এর পরে ঐ কলেজ থেকেই বি এ পাশ করি ১৯৬১ সালে। আর তারপরে সংস্কৃত বিষয় নিয়ে এম এ পাশ করি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আমার এম এ পাশের ফলাফল বেরোনোর আগেই সুভাষিণী স্কুলের সেক্রেটারি মশাই আমাদের বাড়িতে এসে বাবাকে বললেন, ‘আমরা বেলাকে আমাদের স্কুলে সংস্কৃতের শিক্ষিকা হিসেবে পেতে চাই’। তখন ঐ স্কুল উচ্চমাধ্যমিক হয়ে গিয়েছিল। আমি তখন ওনাকে বলি, ‘আমারতো এখনও এম এ পরীক্ষার ফল বেরোয়নি’। উনি বললেন, ‘তুমি কি পাশ করবে না? আমরা নিশ্চিত তুমি ভালো ভাবে পাশ করবে। আমাদের স্কুলে সংস্কৃতের শিক্ষিকা নেই। সংস্কৃতের শিক্ষিকার বিশেষ প্রয়োজন। তুমি কাল থেকেই স্কুলে শিক্ষকতা করবে’।
সেটা ছিল ফেব্রুয়ারি মাস। আমি ওনার কথামত ১৯৬৪ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি স্কুলে যাই। সেক্রেটারি মশাই তখনই আমাকে জয়নিং লেটার দিলেন।
আমাদের স্কুলে ১০টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ৪টে পর্যন্ত ক্লাস চলত। আমি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ক্লাস নিতাম। আর অন্য ক্লাশে বাংলা পড়াতাম। এইভাবে ৩৬ বছর স্কুলে শিক্ষকতা করে ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি অবসর নিই।
আমি যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন কলেজের পরিবেশ খুব শান্ত ও স্নিগ্ধ ছিল। তখন সেখানে কোনও রাজনৈতিক গন্ডগোল ছিল না। শিক্ষকদের সাথে ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কও মধুর ছিল। তখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও কম ছিল।
বর্তমানে যাদবপুরের অবস্থা যখন খবরের কাগজে পড়ি, তখন আমার খুব কষ্ট হয়। তখনকার যাদবপুর আর হালের যাদবপুরের ফারাকটা বড্ড বুকে বাজে। ইদানিংকালের যাদবপুরের যে হাল হয়েছে, সেটা ভাবতেই কষ্ট হয়।
আর কি লিখব ? তোমাদের হায়দ্রাবাদ আলামনি এ্যাসোসিয়েশনের সাথে কদিন কাটিয়ে খুব ভাল লাগল।
সব্বাইকে ধন্যবাদ আর আশীর্বাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করি।
ঈশ্বর তোমাদের সবাইকে সুস্থ ও দীর্ঘায়ু করুন।
ইতি,
তোমাদের
বেলাদি