মাসিমা

শমিতা চক্রবর্তী

সেদিন ছিল সরস্বতী পুজো
নতুন শাড়ী, অঞ্জলী,ধূপ, মন্ত্র –
সবে মিলি হৈ হৈ পুজোমন্ডপে।
বসে ছিলাম সবার পিছনে,
দূর থেকে দেখছি সকলকে,
উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত আমিও সবার সাথে।

খাবার সময় লাইনে দাঁড়িয়ে
চোখে পড়ে তাঁরে –
বসে ছিলেন সামনে চেয়ারে একা
শান্ত চেহারা, জড়ানো খোঁপা চুলে
মুখখানা অচেনা, অজানা –
আগে তো দেখিনি তাঁরে !

আবার দেখি তাঁরে, নাটকের সভাঘরে
অনুরাধা ডেকে বলে-“মা আমার
এসেছেন এখানে”।
মনে পড়ে সেই মুখ, সেই সৌম্য মুখখানি,
অচেনা, অজানা – সত্যি কি ?
দেখিনি কি তাঁরে ?

আবার দেখা এক সন্ধ্যাবেলা অনুরাধার বাড়িতে
প্রণাম করে বলি প্রথম কথা তাঁর সাথে,
মনে হল কত চেনা, কত জানা !
মাতৃত্বের পরশ প্রতি শব্দে
অনন্ত ভালোবাসার ছোঁয়ায়
হারিয়ে যায় মন আমার অন্য পৃথিবীতে।

তারপর ফিরে ফিরে দেখা – অল্প কিছু কথা
স্বল্পভাষিণী অন্তহীন স্নেহের ভান্ডার
সর্বদা মিষ্টি হেসে কুশল প্রশ্ন তাঁর।
অল্প সময়ের ব্যবধানে
বেঁধেছেন সবারে স্নেহের বন্ধনে।

যতবার দেখি তাঁরে,
মন আমার খুঁজে ফেরে
সেই হাসি, সেই অপত্য স্নেহের পসার
বার বার মনে জাগে
কোথায় দেখেছি তাঁকে?
স্মৃতির খনি থেকে উঁকি মারে
ছাব্বিশ বছর আগে হারিয়েছি যারে।

পিতা-পুত্র

মনীষা রায়

বিধান চৌধুরী সারা জীবন পরিশ্রম করে টাকা পয়সা অনেক করেছেন। এমন কী জামসেদপুরের স্টিল কোম্পানির চিফ কেমিস্টের পদ থেকে বিশ্রাম নেবার পরও আবার নানা জায়গায় কন্সাল্টিং-এর কাজ করেছেন। স্ত্রী সুজাতার আপত্তি সত্বেও ভবানীপুরের পৈতৃক বাড়িটা বিক্রি করে সল্টলেকে একটা ছোট দোতলা বাড়ি কিনে উঠে এলেন তাঁর সত্তর হবার আগেই। আত্মীয় পরিজন চিরকাল বিধান চৌধুরীকে যথেষ্ট প্রগ্রেসিভ এবং আধুনিক বলে জানেন। নতুন বাড়িতে তাঁর পছন্দ মতো আধুনিক ডিজাইনের ফার্নিচার এল। সুজাতা এত বছরের আসবাব পত্র, পুরোনো ছবি, লেপ-তোষক, জামা-কাপড়, এমনকি শাশুড়ির আমলের হাতের কাজ করা বিছানার চাদর, বালিশের ঢাকনা এসব বিলিয়ে দিতে বাধ্য হলেন। পুরোনো রংচটা লোহার ট্রাঙ্কটা ভর্তি করে যখন বাড়ির ঝি সব নিয়ে গেল তখন বুকের ভেতরে একটা ঠান্ডা কষ্ট চেপে ধরেছিল।তাঁদের একমাত্র সন্তান কৌশিক যখন আমেরিকা গিয়েছিল তখনও কিন্তু সুজাতা এভাবে কষ্ট পাননি; জানতেন ঐ বিচ্ছেদটা স্বাভাবিক এবং হয়তো সাময়িক।
সুজাতা জানতেন স্বামীকে এসব কথা বললে হেসে উড়িয়ে দেবেন, নয়ত ব্যঙ্গ করে কিছু একটা বলবেন। তাতে কষ্ট আরও বাড়বে। এভাবে এত বছরের সংসার ভেঙ্গে সমস্ত ইতিহাস উপড়ে চলে আসাটা অলক্ষুণে বলে মনে হয়ছিল। চল্লিশ বছর আগে যখন চৌধুরী পরিবারে নতুন বৌ হয়ে এসেছিলেন, তখন শাশুড়ি বলেছিলেন, “ তুমিই এখন এবাড়ির কর্ত্রী, আমরা চলে গেলে এ সংসারের পুরোপুরি দায়িত্ব তোমার”। একমাত্র ছেলের বৌ হয়ে সুজাতা সে দায়িত্ব যথাসম্ভব পালন করার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু আজ এই বার্ধক্যের সূচনায় সেই প্রতিশ্রুতি ভাংতে হল। হয়ত এই বিরাট পরিবর্তন তাঁর বিবাহিত জীবনান্তের ঘোষণা। কথাটা মাথায় আসা মাত্র সুজাতা সেটা মনের অতলে ঠেলে দিয়েছিলেন। যদিও এই দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে স্বামীর হৃদয়ের আনাচে-কানাচে কতটা প্রবেশাধিকার পেয়েছেন সেটা এখন জানেন না।
একদিন বিকেলে পুরোনো বাড়ির শোবার ঘরে বসে চা খেতে খেতে স্ত্রীর মুখ ভার দেখে বিধান চৌধুরী হেসে বলেছিলেন, “দ্যাখো, বয়স তোমার আমার কারোরই কমছে না।এই সময় যদি একটু আরাম করে থাকতে না পারি তাহলে এত পয়সা কড়ি রোজগার করে কী লাভ। ঠাকুরদাদার তৈরি বাড়ি যতই শক্তপোক্ত হোক, অ্যামিনিটিস এক্কেবারে নিল। চেষ্টা করলেও সেসব নতুন করে বানানো সম্ভব নয়। তুমিই না বলেছিলে ছেলে-বৌ দেশে বেড়াতে এলে ওদের খুব অসুবিধে হয়। বাথটাব না হলেও একটা আলাদা শাওয়ার স্টল থাকলে বাথরুমগুলো শুকনো রাখা সম্ভব। ফ্লাশটা বছরে ন’মাস কাজ করে না। জয়েসের কাছে রীতিমত অপ্রস্তুত হতে হয়”।
“তা ঠিক। কিন্তু তাই বলে এতদিনের পুরোনো বাড়ি বিক্রি করে দেবে? এই বাড়ির ইট কাঠে তোমাদের পূর্বপুরুষদের কত স্মৃতি জমে আছে। তোমার মনে কষ্ট হয় না? তাছাড়া কৌশিক আর জয়েস আসে তো সেই দু বছরে তিন বছরে একবার।ছেলেপুলে হলে আসা আরও কমে যাবে, দেখো”। “আঃ হা, এর ভেতর আবার সেন্টিমেন্টাল হবার কী দরকার ! তোমার ঐ এক দোষ, হুট করে মন টন টেনে এনে একটা জট পাকিয়ে তোল। চেঞ্জ, — বুঝলে, চেঞ্জ ছাড়া জীবনে নতুন কিছু ঘটতে পারে না। সেই মান্ধাতার আমলে পড়ে থাকলে পৃথিবী এগোবে কী করে ?” তারপর আরও কত কী বলে গিয়েছিলেন বিধান চৌধুরী, যার অনেক কথাই সুজাতার বোধগম্য হয়নি; হয়তো বোঝার চেষ্টাও তেমন করেন নি। সুজাতা কাজ আর অনুভূতি দিয়ে পৃথিবীটা দেখার ও বোঝার চেষ্টা করতেন। বিশ্লেষণ করা তাঁর স্বভাব নয়। তাই পুরোনো জীবন ছেড়ে আসার শোক ভুলতে চেষ্টা করলেন নতুন বাড়ির হাজার কাজে। হয়তো অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলেই এক মাসের মধ্যে বিছানায় পড়লেন। প্রথমে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, তারপ্র নানা উপসর্গ। সলটলেকের হাস্পাতালের বড় বড় ডাক্তাররা অনেক চিকিতসা করেও কিছু করতে পারলেন না।নতুন বাড়িতে উঠে আসার আড়াই মাসের গোড়াতেই মাত্র চৌষট্টি বছর বয়সে সুজাতা তাঁর স্বামীর শখের কেনা নতুন বাড়ি থেকে শুধু নয় পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিধান চৌধুরী শোকে ভেঙ্গে পড়লেন।
খবর পেয়ে আমেরিকা থেকে ছেলে ছুটে এল। শ্রাদ্ধের পর বাবাকে অনেক পীড়াপীড়ি করল ওর সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে ক’মাস থাকতে। জায়গা বদল, হাওয়া বদলে মনটা শান্ত হবে। উত্তরে বিধান চৌধুরী কেবল বললেন, “এখন নয়। তোর মার খুব শখ ছিল হরিদ্বারে যাবেন তীর্থ করতে। ভাবছি সেখানে কিছুদিন কাটাব। তারপর দেখা যাবে। কৌশিক চলে যাবার পর দিন বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে চলে গেলেন হরিদ্বার। সেখানে এক মঠে কাটালেন ন’মাস। ফিরে এসে আবার যথারীতি পুরোনো জীবনে ফিরে গেলেন – শনিবার গলফ, রবিবার ক্যালকাটা ক্লাবে দু-একজন বন্ধুর সঙ্গে স্কচ সহযোগে তাস খেলা এবং বাকি সপ্তাহ নিজের বাড়িতে বসে বই, কাগজ-পত্র ঘাঁটা। সপ্তাহে একদিন ছেলের সঙ্গে ই-মেল মারফৎ চিঠির আদান-প্রদান হয়, মাঝে মাঝে ছেলের বৌয়ের নামটাও জুড়ে দেন সম্বোধনে। মাস ছয়েক পর একদিন জয়েসের একটা ই-মেল এল শ্বশুরকে আমন্ত্রন জানিয়ে।‘আপনি আগে আসতে চাননি, এখনতো হল প্রায় দু’বছর, এবার আসবেন কি ? এলে কৌশিক ও আমি খুব খুশি হবো।ই-মেলটা পেয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে ফেললেন এবারে যাবেন।
একটা সুটকেসে চাকুরি জীবনে কেনা দামি তিনখানা স্যুটের সঙ্গে সুজাতার কয়েকটি গয়না ভরে নিলেন। জয়েসকে তার মৃত শাশুড়ির উপহার হিসেবে দেবেন; ব্যবহার করাটা ওদের ইচ্ছের অপর। সুজাতা এক মাত্র ছেলের বৌয়ের জন্যেই গয়নাগুলো রেখে গেছে।বাড়ির কাজের মহিলাকে দু-মাসের মাইনে সহ তিন মাসের ছুটি দিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে প্রতিবেশীদের বললেন, তিন মাস পশ্চিম গোলার্ধে কাটাতে যাচ্ছেন।‘দেখে আসি আমেরিকার মাহাত্ম্য’। বলে হাসলেন। বন্ধুবান্ধবরা খুশি হল যে স্ত্রী-বিয়োগের পর বিধান চৌধুরী আবার তার নিজস্ব ফর্মে ফিরে এসেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালির সান হোসে শহরে কৌশিক আর তার বৌ জয়েসের কাছে এক মাস বিশ্রামে কেটে গেল বিধান চৌধুরীর।ইতিমধ্যে উইকেন্ডে ছেলে-বৌ গাড়ি করে বেশ কিছু দ্রষ্টব্য স্থান দেখিয়েছে। গোল্ডেন গেট, নাপা ভ্যালির ওয়াইন কান্ট্রি, ম্যুর এবং রেডউড ফরেস্ট, ইত্যাদি। কোনও কোনও শনিবার কৌশিক আর জয়েসের বন্ধুবান্ধবরা আসে ককটেল বা ডিনারে। এরা সব কম বয়সি ছেলেমেয়ে; বেশিক্ষণ আড্ডা দিতে গেলেই মতভেদ দেখা দেয়। ভদ্রতার খাতিরে বিধান চৌধুরী তখন চুপ করে যান। সারাটা দিন একা কাটে। নিউ ইয়র্ক টাইমস ও নানারকম সাপ্তাহিক কাগজ পত্র ঘেঁটে, টেলিভিশন দেখে সময় কাটতে চায় না।ঠিক করলেন ছেলেকে বলবেন যদি কোনও গলফ ক্লাবে যোগ দেওয়া যায়।নয়তো টিকিট বদলে আর এক মাসের ভেতর ফিরে যাবার কথা ভাববেন।
এক সকালে ব্রেকফাস্টের পর রোজকার রুটিন শেষ করে, বেলা এগারোটা নাগাদ দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস আদ্যোপ্রান্ত পড়া হয়ে গেলে বিধান চৌধুরী রান্নাঘরে গেলেন চা বানাতে।এদেশে আসার পর দিনই জয়েস শ্বশুরকে দেখিয়ে দিয়েছে কী করে চা কফি বানাতে হয়। কখনও ভাবেননি এই বয়সে নিজের হাতে চা করে খেতে হবে।
জলের কেটলিটা ইলেক্ট্রিক স্টোভে বসাবার সঙ্গে সঙ্গে সদর দরজার বেল বেজে উঠল।একটু চমকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখেন এক আমেরিকান মহিলা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন – হাতে একটা প্লেটে চকলেট-কেক। মহিলা বসার ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বল্লেন, ‘আমি মার্গারেট উইলসন, পাশের বাড়িতে থাকি। আপনি যখন এলেন তখন আমি ছুটিতে ছিলাম, তাই দেখা হয়নি। জয়েসকে আমি কথা দিয়েছিলাম মাঝে মধ্যে এসে আপনাকে দেখব। হিয়ার আ য়্যাম’। মার্গারেট উইলসন বিধান চৌধুরীর পাশ কাটিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন এবং কাউন্টারের ওপর কেকটা রেখে আবার বললেন, ‘আশা করি আপনি চকোলেট-কেক পছন্দ করেন। আমি নিজে তৈরি করেছি’। যেন কোন এক স্বপ্ন বলে কোথা থেকে এক সোনালি চুলের সুন্দরী তাঁর সামনে আবির্ভূত। মধ্যবয়স্কা হলেও মারগারেটের অবয়বে যুবতির প্রাণোচ্ছ্বলতা। ভর দুপুরে একা একজন সুন্দরী বিদেশী মহিলার সঙ্গে গল্প করার অভিজ্ঞতা নেই বিধান চৌধুরীর। এতক্ষণে তাঁর সম্বিত ফিরে এল। তাড়াতাড়ি নিজের পরিচয় দিয়ে মহিলার সঙ্গে করমর্দন করলেন এবং খাবার টেবিলের একটা চেয়ার টেনে বসতে দিলেন। ইতিমধ্যে কেটলির জল ফুটে একটা তীক্ষ্ণ হুইসেলের আওয়াজ শুরু হল। মার্গারেট তৎক্ষণাৎ স্টোভের সুইচটা অফ করে চায়ের সরঞ্জাম বার করে দুজনের জন্য চা বানাল এবং সঙ্গে সঙ্গে অনেক কথাও বলল।
পনের বছর আগে মার্গারেট তার স্বামীকে হারিয়েছে একটা এক্সিডেন্টে। তারপর থেকে অনেক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। পঞ্চাশ বছর বয়সে তাকে আবার চাকরিতে ঢুকতে হয়েছে। এক কোম্পানিতে অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কাজ করেছে এবং মাত্র তিন বছর হল রিটায়ার করেছে। একটি মাত্র সন্তান লেখা পড়া শেষ করে মিনিয়াপোলিসে গেছে এক হাইস্কুলে পড়াতে। ছেলেকে নিয়ে মায়ের খুব গর্ব, কারণ সে আদর্শবাদী – মাইনে সামান্য হওয়া সত্ত্বেও সে স্কুলের শিক্ষক হয়েছে। প্রায় দু-ঘন্টা অনেক গল্প করল মার্গারেট । এত অল্প সময়ের আলাপে যে একজন মহিলা একজন অচেনা পুরুষের সঙ্গে এতটা স্বাভাবিক ভাবে মিশতে পারে, বিধান চৌধুরী ভাবতেই পারেন না।
বেলা দেড়টা নাগাদ যখন মার্গারেট উঠল তখন তাঁর কেবল মনে হচ্ছিল যদি কোনও অজুহাতে আরও কিছুক্ষণ আটকে রাখা যেত মহিলাকে। তখন লাঞ্চের সময়, খাবার নেমন্তন্ন না করে কাউকে আটকে রাখা অভদ্রতা। তাছাড়া এই কয়েক ঘন্টার আলাপের পর একজন মহিলাকে খেতে বলাটা এখানকার সমাজেও হয়তো ঠিক নয়। সবচেয়ে বড় কথা, ওকে খাওয়াবেনই বা কী। ওঁর নিজের জন্য ফ্রিজে মাত্র একটা স্যান্ডুইচ তৈরি করা আছে। কৌশিক রোজ সকালে সেটা বানিয়ে রেখে যায়।
অজুহাতের দরকার হল না। সেদিনের পর থেকে মার্গারেট প্রায় প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে দরজায় টোকা দিতে লাগল। কোনও দিন দুজনে হাঁটতে যান একটু দূরে একটা পার্ক অব্দি, কখনও বা ও ড্রাইভ করে নিয়ে যায় শহরের অন্য প্রান্তে পাবলিক লাইব্রেরিতে। ফেরার পথে স্টারবাক্সে কফি খেয়ে বাড়ি ফেরেন। কখনও বা বিধান চৌধুরী মার্গারেট আমন্ত্রণ জানান ওর সঙ্গে বসে স্কচ খাবার জন্য। পেছনের ডেকে বসে দুজন স্কচের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কথা বলেন। বিধান চৌধুরীর কোনও ধারণা ছিল না যে তাঁর এত কথা বলার ছিল। আরও অবাক হন এই ভেবে যে এদেশে প্রতিবেশীরা কেউ মাথা ঘামায় না কে কার সঙ্গে মিশছে, এই নিয়ে। এই স্বাধীনতার মাদকতা যে তাঁকে এক মহিলার সঙ্গে স্কচ পান করার বাইরে আরও কিছু বলা বা করার সাহস জোগাতে পারে সেটা বুঝতে পেরে এই প্রবীন মানুষটি একটু ভয়ও পেলেন। অবশ্য ছেলে-বৌকে মার্গারেটের সঙ্গে তাঁর আউটিং সম্বন্ধে ডিটেল কিছু বলেন না।
এক রবিবার সবাই যখন ব্রেকফাস্ট করছে তখন বিধান চৌধুরী জয়েসকে ও বললেন,’চল না সবাই মিলে আজ বাইরে কোথাও খেতে যাই। আমি খাওয়াবো’। তারপর চায়ের কাপে কয়েকবার চুমুক দিয়ে যোগ করলেন, ‘আচ্ছা তোমার নেবার মার্গারেটকেও ইনক্লুড করলে কেমন হয়। সেদিন আমার নাম করে এত ভাল একটা কেক এনেছিলেন। মানুষটা মনে হয় বেশ ভাল। মাঝে মধ্যে বিকেলবেলা আমার সঙ্গে আড্ডা দিতে আসেন – মানে আমি যখন বাগানে জল টল দিতে যাই তখন বেরিয়ে এসে গল্প করেন’।
‘নিশ্চই। লেটস ডু দ্যাট। আই শ্যাল কল হার রাইট নাও।গুড আইডিয়া’। জয়েস সেই রাত্রে বিছানায় কৌশিককে বলেছিল যে তাঁর বাবা আসলে সত্যি কথাটা চেপে গেছেন। কারণ মার্গারেট জয়ে্সকে ইতিমধ্যে বলেছে যে ওর শ্বশুর এবং সে প্রায় প্রতিদিন দেখা করে। কৌশিক এই খবরে খুব একটা খুশি হতে পারল না, যদিও জয়েস হেসে ওকে ঠাট্টা করল, ‘হোয়াট আর ইউ ওয়ারিড অ্যাবাউট ? এটা তো খুব ভাল কথা। লেট দ্য ওল্ড ম্যান হ্যাভ সাম ফান। দে আর বোথ ফ্রি টু ডু সো’।
‘ইউ ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড’- বলে কৌশিক অন্য পাশে ফিরে শুয়েছিল। অবশ্য জয়েসের কথাটা তাঁর মাথায় রয়ে গেল।লক্ষ্য করল বাবা যেন আগের তুলনায় একটু বেশি উৎফুল্ল। কথায় কথায় অ্যামেরিকার প্রশংসা, যা আগে করতেন না।
দেখতে দেখতে দু-মাস কেটে গেল। বিধান চৌধুরীর ভিসা যদিও ছ’মাসের জন্য, কিন্তু উনি প্রথম থেকেই বলে রেখেছেন যে তিন মাসের ওপর একটা দিনও তাঁর থাকা সম্ভব নয়। একদিন খাবার টেবিলে কৌশিক বলল, ‘বাবা, তোমার তো দেশে ফেরার দিন প্রায় এসে গেল। আমি ভাবছি এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে তোমাকে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নটা দেখিয়ে আনবো। জয়েস এই মুহূর্তে ছুটি পাবে না। যাবে?’
‘আরে তাড়া কিসের?’ বিধান চৌধুরী ইংরেজিতে বললেন।‘আমার ভিসা তো রয়েছে ছ’মাসের জন্য। ভেবে দেখলাম একবার যখন এসেছি, নাহয় পুরো সময়টাই কাটিয়ে যাই। তোমরা এত করে বলছো, তাই আগের প্ল্যানটা বদলালাম। আর ইউ হ্যাপি নাও?’ বলে বিধান চৌধুরী হাসি মুখে জয়েসের দিকে তাকালেন।
‘অফকোর্স। উই আর অল ডিলাইটেড’। জয়েস তাড়াতাড়ি কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বলল। মনে মনে ভাবল, কারণটা সে ভাল করেই জানে। সে রাত্রে আবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই নিয়ে আলোচনা হল।জয়েস সাজেস্ট করল মার্গারেটকে ওদের সঙ্গে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে যাবার আমন্ত্রণ জানাতে। কৌশিক রেগে মেগে বলে উঠল, ‘আর ইউ আউট অব ইওর মাইন্ড? তুমি এখন তোমার শ্বশুরের বিয়ের ঘটকালি করবে মনে হচ্ছে!’ এই নিয়ে দুজনের বেশ কথা কাটাকাটি হল। জয়েস কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না কৌশিক কেন তাঁর বাবার সুখে সুখী নয়। তাঁর আপত্তির আসল কারণটা কৌশিক নিজেই জানে না, জয়েসকে কী করে বোঝাবে! তবু চেষ্টা করল।‘মা চলে গেছেন মাত্র দু’বছর হয়েছে।বাবা কী করে এত তাড়াতাড়ি মাকে ভুলে গেলেন?’ তাঁর যুক্তিটা যে একজন অ্যামেরিকানের কাছে অকাট্য নয় সেটা বুঝে আর কথা বাড়াল না।
চার মাস পর একদিন বিধান চৌধুরী ছেলেকে বললেন যে কোলকাতা থেকে তাঁর প্রতিবেশীর চিঠি এসেছে। ওঁর বাড়িতে নাকি চোর ঢোকার চেষ্টা করেছে কয়েকবার। তাই ওঁর দেশে ফেরা দরকার। সেই সঙ্গে আরেকটি কথা বললেন যা কৌশিক একেবারেই আশা করেনি।বললেন, ‘সেদিন কথায় কথায় তোদের নেবার মার্গারেট বলছিল ওর বহুদিনের ইচ্ছে ইন্ডিয়া দেখার। আমাকে এই নিয়ে কয়েকবার জিজ্ঞাসা করেছে, ও যদি আমার সঙ্গে যায় তাহলে আমি হয়তো কিছু সাহায্য করতে পারি। প্রথমবার যাচ্ছে কিনা। ওর ছেলেও আমাকে টেলিফোনে অনুরোধ করেছে। তাই মার্গারেটকে আমার সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। মাস খানেক থেকে ফিরে আসবে। আমি জানি তুমি আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে বেশ চিন্তিত। তোমার চিন্তার কোনও কারণ নেই’। এই বলে তিনি নিজের শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।
দু’সপ্তাহ পর কৌশিক ও জয়েস, বিধান চৌধুরী এবং মারগারেটকে সানফ্রান্সিস্কো এয়ারপোর্টে এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনে তুলে দিয়ে যখন বাড়ি ফিরছিল তখন কৌশিক স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করল,’হোয়াট ডু ইউ থিঙ্ক? আর দে ইন লাভ?’
‘হাও ডু আই নো? হি ইজ ইওর ফাদার’।

ইথিওপিয়ার তিন কবিতা

প্রোফেসর প্রণব ভট্টাচার্য

 

বেউকেটু সেওউম — ইথিওপিয়ার নতুন প্রজন্মের এক যুবা কবি ও লেখক।উত্তর-পশ্চিম আদ্দিসাবাবার অধিবাসী।বাবা ইংরাজীর অধ্যাপক,মা খ্রীস্টসম্প্রদায়ের এক পুরোহিতের মেয়ে। ছোটগল্প, উপন্যাস ও কবিতার সর্বসাকুল্যে আটখানি বই প্রকাশিত.২০০৮ সালে রাস্ত্রপতি দ্বারা “বছরের শ্রেষ্ঠ যুবা লেখকের” সম্মানে ভূষিত হন ও ২০১২ তে লন্ডনে অনুষ্ঠিত “পোয়োট্র পারনাস” উৎসবে ইথিওপিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন।
১) স্বাধীনতার দরজায়

 যদি কখনও ঐ অত্যাচারিত প্রেতাত্মারা
এতদিন শেকলের বন্ধনে যারা বেঁচে ছিল
আজ যদি হঠাৎই তারা স্বাধীনতার ডাক দেয়—
ওদের জেল ঘরের দরজাগুলো খুলে দিলেও
আর রক্ষীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেও
ওরা কিন্তু সত্যিকারের স্বাধীনতা পাবেনা
যতক্ষণ না পর্যন্ত
জেলঘরের সমস্ত দেওয়াল
ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়।

২) নিষিদ্ধ
ধুমপান নিষিদ্ধ
শিস দেওয়া নিষিদ্ধ
মদ্যপান নিষিদ্ধ
প্রেম করাও নিষিদ্ধ।
পুরো দেশটাই নিষিদ্ধের
মোড়কে আবদ্ধ।
এখানে কোনটা বেঠিক
বোঝার উপায় নেই।
আমি কী ভাগ্যবশে একটা
দেওয়াল পেতে পারি।
আর একটু লেখার শক্তি?
সেখানে আমার স্লোগান
হবে “নিষিদ্ধ এই দেশে
মানবতাই নিষিদ্ধ”।

৩) আমার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে

জানো !
আমার একটা ছোট্ট বাসা আছে
কিন্তু কোন বাড়ী নেই,
আমার একটা জমি আছে
কিন্তু কোন জন নেই, ঠিকানা নেই,
আমার নিজস্ব কোন দেশ নেই
কোন নাগরিত্বও নেই
আমি এথার বস্তুসম এক শরীর মাত্র
আমি আমার মাতৃভূমিতে
এক অজানা, অচেনা, অযাচিত
অস্তিত্বহীন এক আগন্তুক মাত্র।
—————

লিউ লিবসেকল — জন্ম ১৯৯০।ইথিওপিয়ায়।পারিবারিক সুত্রে বাল্যকাল কেটেছে পূর্ব-আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে.২০১২তে জৈব-বিজ্ঞানে স্নাতক হন জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।স্নাতকোত্তর অধ্যায়ে তার প্রধান পাঠ্য ছিল আন্তর্জাতিক উন্নয়নকল্প। দেশে ফিরে আসার আগে বেশ কিছু বছর ভিয়েতনামে কাটান। ২০১৩ তে ‘ইথিওপিয়ান বিজনেস রিভিউ’ তে বর্তমান ইথিওপিয়ার পরিস্থিতি ও সংস্কৃতির ওপর লেখা তার একটি জ্ঞানগর্ভ রচনা জনমানসে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়। ২০১৪ তে ব্রত্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে শ্রেষ্ঠ ‘আফ্রিকান পোয়েত্রি’ পুরষ্কারে সম্মানিত করে।

১) ছেলেবেলায় ময়লাহাতে মাটিখেলা

যে মহিলাটি আমার জন্মদাত্রী
কী অপূর্ব মহিমায় তার দুহাত
সাবলীল ভঙ্গীমায়, নীরবে
কাজ করে চলতও, অবাক আমি
মনে হতো সবই যেন নিছক ছকবাঁধা।
আমি মনে করি
জাদুসম নিঁখুত কাজগুলো
তার বয়সের অভিজ্ঞতা।
মাটির ভেতরের কেঁচোগুলো একে একে
নিত্য প্রজননক্রিয়া সেরে
বিনাদ্বিধায় নিজেদের সিক্ত করে,
লাল মাটি আর পরিত্যক্ত পাইপের
আনাচে-কানাচে, আমার অস্থির
হাতযুগল বেমালুম ঘুরে বেড়াতো
কী জানি কীসের খোঁজে ?

২) বোকার প্রেম

আমার কাছে
সে এক সামান্য নারী নয়
তার সমস্ত শরীর ঘিরে
আকাশের তারাদের আস্তানা
পৃথিবী তার অন্তরাত্মা
যদি সারাটা জীবন ধরে
পালিয়ে বেড়াতে চায়
তবুও সে বেশিদুর যেতে পারবে না
ধরা পড়বেই একদিন।

৩) আমি পাহাড়ে চড়বো না

আমি পাহাড়ে চড়বো না
নিত্য ভাসমান মেঘেদের ছুঁতে,
আমি ঐ সদাহাস্যময় রামধনুকেও
বিচলিত করতে এগিয়ে যাবনা ।
যখন আমি সত্যিই চড়তে চাইবো
তখন ‘টেক্লে হ্যামানট’-এর ডানায়ে চড়ে
অথবা ‘জেকব’-এর সিঁড়ির দাক্ষিন্যে
পাহারে চড়বো না,
আকাশ নিজেই স্বইচ্ছায়
আমার কাছে নেমে আসবে।

—- অনুবাদ – প্রোঃ
নেকেমটে, ইথিওপিয়া (আফ্রিকা)

Source: Internet

ব্যক্তিগত চিঠি

বেলা দাস

আমি বেলা দাস।
বর্তমানে আমার বয়স ৭৬ বছর। আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ১৯৬১ সালে সংস্কৃতে বেদান্ত গ্রুপ নিয়ে ১৯৬৩ সালে পাশ করি। আমার স্বর্গত বাবা বরাবরই পড়াশোনা খুব ভালোবাসতেন।
আমরা ছয় বোন আর দুই ভাই। বাবা প্রত্যেককে ভালোভাবে পড়াশোনা করিয়ে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। আমি হরিনাভি গ্রামে মেয়েদের স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করি।স্কুলের নাম সুভাষিণী বালিকা শিক্ষালয়। তখন ঐ স্কুল অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছিল। কাজেই আমাকে পাশের গ্রামের পদ্মমণি বালিকা বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেনীতে পড়ে স্কুল ফাইনাল পাশ করতে হয়। তখন সেটা ১৯৫৭ সাল। তারপর গড়িয়ায় দীনবন্ধু কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করি ১৯৫৯ সালে। এর পরে ঐ কলেজ থেকেই বি এ পাশ করি ১৯৬১ সালে। আর তারপরে সংস্কৃত বিষয় নিয়ে এম এ পাশ করি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আমার এম এ পাশের ফলাফল বেরোনোর আগেই সুভাষিণী স্কুলের সেক্রেটারি মশাই আমাদের বাড়িতে এসে বাবাকে বললেন, ‘আমরা বেলাকে আমাদের স্কুলে সংস্কৃতের শিক্ষিকা হিসেবে পেতে চাই’। তখন ঐ স্কুল উচ্চমাধ্যমিক হয়ে গিয়েছিল। আমি তখন ওনাকে বলি, ‘আমারতো এখনও এম এ পরীক্ষার ফল বেরোয়নি’। উনি বললেন, ‘তুমি কি পাশ করবে না? আমরা নিশ্চিত তুমি ভালো ভাবে পাশ করবে। আমাদের স্কুলে সংস্কৃতের শিক্ষিকা নেই। সংস্কৃতের শিক্ষিকার বিশেষ প্রয়োজন। তুমি কাল থেকেই স্কুলে শিক্ষকতা করবে’।
সেটা ছিল ফেব্রুয়ারি মাস। আমি ওনার কথামত ১৯৬৪ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি স্কুলে যাই। সেক্রেটারি মশাই তখনই আমাকে জয়নিং লেটার দিলেন।
আমাদের স্কুলে ১০টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ৪টে পর্যন্ত ক্লাস চলত। আমি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ক্লাস নিতাম। আর অন্য ক্লাশে বাংলা পড়াতাম। এইভাবে ৩৬ বছর স্কুলে শিক্ষকতা করে ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি অবসর নিই।
আমি যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন কলেজের পরিবেশ খুব শান্ত ও স্নিগ্ধ ছিল। তখন সেখানে কোনও রাজনৈতিক গন্ডগোল ছিল না। শিক্ষকদের সাথে ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কও মধুর ছিল। তখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও কম ছিল।
বর্তমানে যাদবপুরের অবস্থা যখন খবরের কাগজে পড়ি, তখন আমার খুব কষ্ট হয়। তখনকার যাদবপুর আর হালের যাদবপুরের ফারাকটা বড্ড বুকে বাজে। ইদানিংকালের যাদবপুরের যে হাল হয়েছে, সেটা ভাবতেই কষ্ট হয়।
আর কি লিখব ? তোমাদের হায়দ্রাবাদ আলামনি এ্যাসোসিয়েশনের সাথে কদিন কাটিয়ে খুব ভাল লাগল।
সব্বাইকে ধন্যবাদ আর আশীর্বাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করি।
ঈশ্বর তোমাদের সবাইকে সুস্থ ও দীর্ঘায়ু করুন।
ইতি,
তোমাদের
বেলাদি

আমাদের রাজামশাই

ডঃ সুবীর চৌধুরী

আমার শহর কোলকাতা
একটা প্রধান আড্ডা দক্ষিণ কোলকাতায়
ওখানের রাজা চাকী আমাদের চিলেকোঠায় ছাতা
আমি এখানে আসি রাজার কাঁচের ঘরটায়।।
ছুরি চলছে পটাপট রাজা মত্ত অস্ত্র চালানোয়
চোখ দুটো ঘোলাটে তাও এখন আঁধারে
সে তার রাজত্বে সান্ধ্য মজলিসেরও ব্যবস্থায়
আর পুরো বন্ধু মহল ক্লান্ত রাজার তাড়নায়।।
হে বন্ধু তুমি কোথায়
কোথায় তোমার সেই জমিদারী মেজাজ
তুমি তো সারা পৃথিবী দৌড়ও
তোমার অর্ধাঙ্গিনীর নানা ব্যবস্থায়।।
আমাদের গত বছর হায়দ্রাবাদে কেটেছে তোমারই চিন্তায়
আমি জানিনা কার এত প্রাণ আছে
আমি জানিনা কার এত দিল আছে
তাই খুঁজে বেড়াই আজকের বিশেষ দিনে তোমায়।।

(আমার ডাক্তার অন্ধ-বন্ধু ইন্দ্রজিৎ চাকী তার অর্ধাঙ্গিনীকে নিয়ে চলে গেল। এ বেদনা সত্যিই অসহ্য।
হৃদয়ের জ্বালা মেটাতে লিখলাম দু লাইন ছন্দ) — ১০/০৯/২০১৭

পুস্তক আলোচনা

সঞ্চিতা ধর

 স্মৃতিচারণ  – শ্রী দিলীপ কুমার রায়

বই আমাদের বড় কাছের সুহৃদ৷ অবসরের প্রিয় বন্ধু৷ এই প্রসঙ্গে জানাই সম্প্রতি একটি বই পড়ে খুবই ভালো লেগেছে, আপ্লুত হয়েছি, মনে হয়েছে এটি সকলকে একটু জানাই৷ সকলেই এই বইটি পড়ার আনন্দ উপভোগ করুন৷

বইটি হলো বিখ্যাত নাট্যকার, সঙ্গীত রচয়িতা ও সঙ্গীতশিল্পী শ্রী দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-এর সুযোগ্য পুত্র সুগায়ক শ্রী দিলীপকুমার রায় রচিত ‘স্মৃতিচারণ’৷ ভাষার সহজবোধ্যতার জন্য বইটি অত্যন্ত সরস৷ ‘স্মৃতিচারণ’ মানে কিছুটা আত্মজীবনী তো বটেই আবার সেই সঙ্গে জীবনে চলার পথে যাদের সঙ্গে সময় কাটানো হলো, তাদের সম্বন্ধেও কিছুটা বলা৷

এই বইটি জুড়ে রয়েছে জীবনের নানা আকর্ষনীয় অভিজ্ঞতা৷ বিভিন্ন প্রখ্যাত গুনীজনের সংস্পর্শে এসেছেন লেখক নানাসূত্রে. যমন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ছিলেন তার অন্তরঙ্গ বন্ধু৷ স্বদেশ ও বিদেশ –ওই দুই প্রেক্ষাপটেই তিনি তাকে চেনবার জানবার সুযোগ পেয়েছেন৷ তার মাধ্যমে আমরাও নতুন করে পরিচয় পাই নেতাজীর অনন্য মহত্বের, স্বদেশপ্রেমের৷ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও তার খুবই হৃদয়ের যোগাযোগ ছিল৷ লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ও অভিভাবক স্থানীয়৷ এছাড়া অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের সুন্দর একটি চিত্রণ এই বইটিতে মেলে যা খুবই উপভোগ্য৷

এই বইটির আগাগোড়া যেটি রয়েছে তা হলো লেখকের আত্মজিজ্ঞাসা৷ মধ্য বয়েসে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন৷ ঋষি শ্রী অরবিন্দ তাকে দীক্ষা দিয়েছিলেন৷ তাই একাধারে সাধক ও শিল্পী দিলীপকুমার রায়কে আমরা দেখতে পাই এই বইটিতে৷ তার সাধনা ভাগবতী হলেও তা আসলে মানুষেরই সাধনা৷ ‘মানুষ’ই তার ধ্যানের একান্ত বস্তু৷ তাই এই স্মৃতিচারণ বইটি নিছক স্মৃতিকথা নয় বরং জৈবসত্বার বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দার্শনিক বিশ্লেষণ বললে মনে হয় সঠিক হবে৷ সবশেষে জানাই এই বইটি সত্যিই যেন মন ছুঁয়ে যায়৷

স্মৃতিচারণ

লেখক- শ্রী দিলীপ কুমার রায়

মুল্য- ৪০০ টাকা.

প্রকাশক- আনন্দ পাবলিশার প্রা. লি.

৪৫, বেনিয়াটোলা লেন,

কলকাতা ৭০০০০৯.

Book Review “বিজ্ঞানচর্চা আর চিকিৎসা নিয়ে নানান ভাবনা – মাধব চট্টোপাধ্যায়”

ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্ত্তী

হায়দ্রাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির মাধব চট্টোপাধ্যায়ের নাম বিজ্ঞানী মহলে সুপরিচিত।
আর হায়দ্রাবাদের বাঙালিদের আসরে ওনার নাম মুখে মুখে ফেরে বললে যে মোটেই বাড়িয়ে বলা হবে না সে বিষয়ে আমি একেবারে সুনিশ্চিত। উনি একাধারে বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, পত্রিকা সম্পাদক এবং তার থেকেও যেটা বড় কথা সেটা হল মাধবদা হচ্ছেন নিবেদিত প্রাণ আপাদমস্তক ভদ্রলোক এক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। তাঁর বিজ্ঞানপিপাষু মন দৈনন্দিন জাগতিক সমস্ত রকম কর্মকান্ডের কার্যকারণ অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হয়। সেই অনুসন্ধান দ্বারা প্রাপ্ত ফল তিনি যে স্বার্থপরের মতন শুধু নিজের জ্ঞান ভান্ডারেই সঞ্চয় করে রাখেন তা মোটেই নয় বরং তিনি আমাদের মতন আমজনতার দরবারে এমন সহজ সরল ভাবে পরিবেশন করেন যাতে তা আমাদের মস্তিষ্কে সহজপাচ্য হয়।
বহু মহাজ্ঞানী মহাজন আছেন যাঁরা কঠিন বিষয়গুলোর কাঠিন্যতাকেই বজায় রাখতে চান পাছে আমজনতার কাছে তাঁদের নিজেদের মেকি ওজনদার ইমেজটা নষ্ট না হয়ে যায়। এনারা নিজেদেরকে এক ভিন্ন গ্রহের প্রাণী হিসেবে উপস্থাপিত করতে চান। বাকিসব জীবকে ক্ষমা ঘেন্নার দৃষ্টিতে দেখতে ভালবাসেন তাঁরা।
এইখানেই মাধবদা সবার থেকে আলাদা আর এটাই ওনার কৃতিত্ব।
বিজ্ঞানকে তিনি বিজ্ঞানীদের দেওয়ানীখাসের ইন্টেলেকচুয়াল দরবার থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে সাধারন মানুষের দেওয়ানীআম দরবারে হাজির করাতে চান। এর ফলে যে সাধারন মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান চর্চা আরো বাড়বে সে বিষয়ে তিনি নিঃসন্দেহ। এতে যে আখেরে বিজ্ঞানেরই লাভ সেটা বলাই বাহুল্য। মাধব চট্টোপাধ্যায় ছাড়া আর কেই বা সেটা ভাল বুঝবে!
এই মাধবদার সাথে আমার কেন জানি না আলাপ পরিচয় হয় অনেক পরে। অবশ্য মাধবদাকে আমি একটু যেন সযত্নে এড়িয়েই চলতাম। মাঝেমধ্যে ছোটখাট সাহিত্য পাঠের আসরে, আলোচনায় দেখা সাক্ষাৎ হত এবং সেখানে আপাত নিরীহ কোন বিষয় নিয়ে ওনার সাথে আলোচনা যে একেবারে হয় নি তা নয় তবে আমি এই বিজ্ঞান তপস্বী মানুষটিকে দূর থেকে একটু সম্ভ্রম সহকারে দেখতেই ভালবাসতাম।তা সেই মাধবদা যখন আমাকে তাঁর প্রকাশিত “বিজ্ঞানচর্চা আর চিকিৎসা নিয়ে নানান ভাবনা” বইটার রিভিউ লিখতে অনুরোধ করলেন তখন আমি অকুল পাথারে পড়লাম বলা যায়।
শুধু অনুরোধ করেই ক্ষান্ত হলেন না তিনি। একদিন দেখি সুদূর ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহর নিবাসী তাঁর প্রকাশক বইটা আমার হায়দ্রাবাদের বাড়িতে হাজির করিয়ে দিলেন ভারত সরকারের দ্রুতগামী ডাক ব্যবস্থার মাধ্যমে!
আমি যাকে বলে কিংকর্ত্যব্যবিমূঢ়!!!
বইটা হাতে নিয়ে দিন দুয়েক নাড়াচাড়া করলাম। পাতা উল্টাতে উল্টাতে দেখলাম বিষয়গুলো অত্যন্ত ভারি। বর্তমান কালের এই Whats App আর Facebook মাধ্যমে পঠন পাঠনের যুগে আমি শেষ কবে আমার মস্তিষ্কের ধূসর কণা গুলোকে নড়াচড়া করিয়েছি তা আমার মনে নেই। সবসময় তরল বিষয়ের সংস্পর্শে থাকার ফলে সর্বপ্রথমে ভারি চিন্তা ভাবনা সামলানোর শক্তিকে মস্তিষ্কের সুদূর গহ্বর থেকে উদ্ধার করে মনের মধ্যে হাজির করানোর প্রচেষ্ঠায় কয়েকদিন কেটে গেল। মন বলতে লাগল কি দরকার এইসব কঠিন কর্মকান্ডের উত্তাপে হাত পুড়িয়ে আবার হৃদয়ের শব্দ বলতে থাকে ”বৎস্য, প্রতিফলিত আলোকের আলোতে আলোকিত হবার এই সূবর্ণ সুযোগটির সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা কর।“
বেশ কয়েকদিন বেডসাইড টেবিলের কোনায় পড়ে থাকার পর অবশেষে অনেক টানাপোড়েনের ঝড় ঝাপটা সামলে একদিন হৃদয়ের শব্দে সাড়া দিয়ে বইটা হাতে তুলে নিলাম।
অতএবচ “শ্রী গণেশ”।
বইটাকে আবার নতুন চোখে দেখলাম। ইকো-গ্রীন রঙের বেস কালারের ওপর অপরেশ পাল কৃত বৈজ্ঞানিক কিছু নকসা সম্বলিত প্রচ্ছদ আর সেই সঙ্গে ঝকঝকে জ্যাকেটসহ “বিজ্ঞানচর্চা আর চিকিৎসা নিয়ে নানান ভাবনা“ বইটির প্রকাশে প্রকাশকের যত্নের তারিফ করতে হয়।
বইটির Epitome-এ অল্প অথচ প্রয়োজনীয় শব্দের মাধ্যমে বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং বিজ্ঞান নিয়ে মিথের ওপর কিছু দরকারি কথা খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে বলা হয়েছে।

২/-

(২)

আগরতলার “জ্ঞান বিচিত্রা“ প্রকাশনা সংস্থাটি একটি ব্যতিক্রমী প্রকাশনা গোষ্ঠী। লেখা মনোনীত করার ব্যপারে লেখকের থেকে এনারা লিখিত বিষয়কেই বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। একদা হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত বইমেলাতে ওনাদের বইয়ের ভান্ডারে বেশ কিছু মনকাড়া প্রকাশন নজরে এসেছিল। ওনাদের প্রকাশিত একটি অন্য ধরনের কবিতা সঙ্কলন আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহ আজও আলো করে আছে।
ISBN নম্বরসহ মাধবদার “বিজ্ঞানচর্চা আর চিকিৎসা নিয়ে নানান ভাবনা” বইটি হাতে নিয়ে মনটাতে বেশ একটা তৃপ্তির স্পর্শ পেলাম। বইটির “মুখবন্ধ” নান্দীমুখটি দেখলাম মাধবদার নিজেরই লেখা। জানতে পারলাম স্কুল জীবন থেকেই বিজ্ঞান তাঁকে আকর্ষন করেছে। তারপর তিনি একে একে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সবাইকে যাঁরা তাঁর এই বিজ্ঞানপিপাষু মনকে নানা সময়ে নানা ভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। বুক ভরা কান্না নিয়ে স্মরণ করেছেন তাঁর অকাল প্রয়াত অগ্রজ উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণাদাতা ডঃ প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে।
সবশেষে আশা প্রকাশ করেছেন, “এই বই পড়ে যদি কারো চিন্তার জগতে সামান্য আলোড়ন ওঠে, ওষুধপত্র সম্বন্ধে সামান্য সচেতনাতা তৈরি হয় তবে সার্থক হবে আমার পরিশ্রম আর (প্রকাশক) দেবানন্দবাবুর উদ্যোগ।“
শতকরা একশ ভাগ বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের একটি আন্তরিক সৎ প্রচেষ্টা।

“বিজ্ঞানচর্চা আর চিকিৎসা নিয়ে নানান ভাবনা” বইটি মাধবদার নানা সময়ে প্রকাশিত মোট সতেরটি প্রবন্ধ সংকলন। এই সতেরোটি প্রবন্ধকে সাধারন ভাবে নিম্নলিখিত তিনটি গোত্রে ভাগ করা যেতে পারে।

(ক) বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ
(১) বিজ্ঞান ও অবিজ্ঞান
(২) বিজ্ঞানকর্মী ও ধর্ম
(৩) বিজ্ঞানের নামে
(৪) বিজ্ঞানমনস্কতা
(৫) বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নৈতিকতা
(৬) নির্যাতিত বিজ্ঞানী
(৭) বিবর্তনবাদ বনাম ধর্মবিশ্বাস

(খ) রোগ জীবানু এবং ওষুধ বিষয়ক প্রবন্ধ
(১) অ্যান্টিঅক্সিডান্টঃ কিছু তথ্য, কিছু প্রশ্ন
(২) হোমিওপ্যাথি
(৩) বসন্তের টিকা
(৪) কলেরা নিয়ে গবেষণায় দুই বাঙালি বিজ্ঞানীর অবদান
(৫) অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহার ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবানুদের বাড়বাড়ন্ত

(গ) অন্যান্য প্রবন্ধ
(১) তিন ডাক্তারের কথা
(২) রামেন্দ্রসুন্দরের বিজ্ঞান রচনার ভাষা
(৩) পরশুরাম রচনায় বিজ্ঞানমনস্কতা ও দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা
(৪) প্রফুল্লচন্দ্র, চরকা ও রবীন্দ্রনাথ
(৫) বঙ্গাব্দঃ কিছু তথ্য, কিছু বিতর্ক

প্রবন্ধগুলির সমাপ্তিতে প্রবন্ধগুলিতে ব্যবহৃত তথ্যসূত্রের কৃতজ্ঞতা স্বীকৃত থাকলেও লেখকের প্রবন্ধগুলির সময়কালের কোন উল্লেখ নেই। তার ফলে সেই সময়ের দেশীয় বিজ্ঞানমনস্কতার সঙ্গে বর্তমান কালের তুলনা মূলক মূল্যবান আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। এটা সুধী পাঠক সম্প্রদায়ের কাছে একটা অপ্রাপ্তি বলা যেতেই পারে।

৩/-

(৩)

এইবার প্রবন্ধগুলির বিষয় নিয়ে আলোচনায় আসা যাক।
সর্বপ্রথমে “অন্যান্য প্রবন্ধ” নিয়ে আলোচনায় আসতে চাই।
“তিন ডাক্তারের কথা”য় যে তিনজন ডাক্তারবাবুর কথা আছে তার মধ্যে ডাঃ মুরারি মোহন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার পরিবারের সরাসরি যোগাযোগ হয়েছিল গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের প্রথমদিকে।
সেই সময়ে তিনি আমার এক দিদিমার এক দূরূহ অস্ত্রপ্রচার করেছিলেন। অস্ত্রপ্রচারের সাফল্যে ডাক্তারবাবু আমাদের পরিবারের কাছে ভগবানরূপে পূজিত হতেন। আবার যখন কলেজে পড়তে গেলাম তখন আমার এক সহপাঠীর জ্যাঠামশাই হিসেবে আমার কাছে পরিচিত ছিলেন। আর্তের সেবায় নিয়োজিত প্রাণ এই ডাক্তারবাবু একসময়ে আমাদের কাছে মডেল রোল হিসেবে বিবেচিত হতেন।

ডাঃ চন্দন সেন আর ডাঃ সুশীল পাল মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের বর্তমান কালের criminalization of politics-এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে। শুধু এই নমস্য ডাক্তারবাবুরাই নন আজকের সমাজের সমস্ত আলোকিত মানুষ যাঁরাই কায়েমি স্বার্থের বিরূদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই চূড়ান্ত হেনস্থার স্বীকার হয়েছেন। সমাজের যাঁরা আইন রক্ষক তাঁরাও সেইসব good Samaritan-দের রক্ষা করতে ব্যর্থ।
তাই আমরা দেখি প্রয়াত মনজুনাথের মা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার নিতে গিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালামকে যখন প্রশ্ন করেন যে সৎ কর্মচারীদের নিরাপত্তা দিতে যখন সরকার ব্যর্থ তখন কিসের ভিত্তিতে সরকার তার কর্মচারীদের কাছ থেকে সততা দাবি করতে পারে! তখন সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নীরব ছিলেন সেদিন।
মাধববাবু সমাজের এই অসহয়তা অতি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই রচনার মাধ্যমে।

“রামেন্দ্রসুন্দরের বিজ্ঞান রচনার ভাষা’ প্রবন্ধে লেখক সঠিকই বলেছেন যে আকাশে সূর্য থাকলে অন্য জোতিষ্ক চোখে পড়ে না। রবিঠাকুর রূপী রবির কিরণে তাঁর সমসাময়িক যে সকল মহান ব্যক্তিদের প্রতিভা ম্লান হয়ে গেছিল রামেন্দ্রসুন্দর তাঁদের মধ্যে অন্যতম। বাংলা ভাষা উন্নতিকল্পে তথা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার কাণ্ডারি হিসেবে ওনার সঠিক মূল্যায়ন হয় নি বলেই আমার মনে হয়। মাধববাবু’র এই প্রবন্ধ রামেন্দ্রসুন্দরের বহু অজানা অনালোকিত কর্মকান্ডের ওপর আলোকপাত করেছে। এটা পাঠকের কাছে একটা বড় প্রাপ্তি।

“পরশুরাম রচনায় বিজ্ঞানমনস্কতা ও দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা” প্রবন্ধের স্বল্প পরিসরে প্রবন্ধকার পরশুরাম ছদ্মনামের অধিকারি লেখক রাজশেখর বসুর “বিজ্ঞানমনস্কতা ও দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা” এই দুই আপাত বিরোধী বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাজশেখর আর পরশুরামের বহু লেখার উল্লেখ করে প্রবন্ধকার আসল মানুষটির সাথে পাঠকদের পরিচয় করাবার চেষ্টা করেছেন। এই প্রবন্ধটিতে শতকরা একশভাগ বিজ্ঞানমনষ্ক প্রবন্ধকার যেন তাঁর প্রথম বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধগুলির “বিজ্ঞানই একমাত্র সত্য” এই একমুখি বিশ্বাসের জায়গা থেকে একটু সরে গেছেন বলেই আমার মনে হয়।
পরশুরাম তথা রাজশেখর বসু আমার কাছে একটি বিস্ময়। ওনার লেখা গীতা অনুবাদ বইটি আমি হায়দ্রাবাদে “জ্ঞান বিচিত্রা”র ষ্টল থেকেই সংগ্রহ করেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। মুখবন্ধে গীতা সম্বন্ধে ওনার যে ধারনার কথা উনি ওখানে লিপিবদ্ধ করেছেন তা এক কথায় অসাধারন।
বড় স্বল্প পরিসরে কমবেশি মাত্র হাজার শব্দ প্রয়োগে মাধববাবু রাজশেখর বসু সম্পর্কে যে খন্ডচিত্রটি আঁকার চেষ্টা করেছেন তা সাধারন পাঠককে রাজশেখর বসু সম্বন্ধে আরও গভীর ভাবে চর্চা করতে আগ্রহী করে তুলবে হয়ত তবে সিরিয়াস পাঠক সম্প্রদায়ের প্রবন্ধকারের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু প্রত্যাশা ছিল।
আমরা আশা করতেই পারি ভবিষ্যতে মাধববাবু রাজশেখর বসুকে নিয়ে আরও বড় কাজে হাত দেবেন। কেননা সর্বশেষে “বিজ্ঞানমনষ্কতা আর নাস্তিকতা সমার্থক নয় – রাজশেখর রচনাবলী খুঁটিয়ে পড়লে এটা স্পষ্ট বোঝা যায়“-প্রবন্ধকারের এই মন্তব্যটি অত্যন্ত দামি।

“প্রফুল্লচন্দ্র, চরকা ও রবীন্দ্রনাথ” পড়ার পর যে কথাটি সর্বপ্রথমে মনে জাগে সেটা হচ্ছে সমসাময়িক এই দুই মহাপুরুষের বিশ্বাসের স্থান দুটি আপাত বিরোধী মনে হলেও দুজনে ছিলেন দুজনের গুণগ্রাহী। মাধববাবু অত্যন্ত কুশলতার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে প্রফুল্লচন্দ্র এবং রবীন্দ্রনাথের difference of opinion-গুলি পাঠক সমীপে হাজির করেছেন সমস্তরকম তথ্যপ্রমাণ দ্বারা।

৪/-
(৪)

এই প্রসঙ্গে প্রবন্ধকারের মন্তব্যটি আমাদের বর্তমান কালের এই অশান্ত সময়ের অসহনশীলতার গোড়ায় আঘাত করবে বলেই আমার মনে হয়। কোন একজন বিখ্যাত ব্যক্তির কোন একটি বিষয়ের ওপর ব্যক্তিগত মতামত আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তির সাথে synchronized নাও হতে পারে কিন্তু তবে তা কখনই ব্যক্তিগত শত্রুতার স্তরে অধঃপতিত হওয়া উচিৎ নয়।

অন্যান্য পর্যায়ের “বঙ্গাব্দঃ কিছু তথ্য, কিছু বিতর্ক” রচনাটি আমাকে এক কথায় মুদ্ধ করেছে। হায় রে, সত্যি কত কম জানি আমরা আমাদের এই বাংলা সনের ইতিহাস সম্বন্ধে! শাহেনশা আকবর থেকে গ্রহ, নক্ষত্র, তিথির সব হিসেব নিকেশ এই রচনাটিতে পাওয়া যাবে। মহাজাগতিক ক্ষেত্রের কি পরিমাণ minute details এই সব গণনায় প্রয়োজন হয় তা আমার ব্যক্তিগত ধারণার বাইরে ছিল। সমৃদ্ধ হলাম এই রচনাটি পড়ে।
বুঝতে পারলাম কি কারনে বাঙালির দুর্গাপুজো, মুসলমানদের ইদের পরবের দিন ইত্যাদি এমন অনেক ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠান এক এক বছরে এক এক দিন অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেল বাংলা বছরে “মলমাস” ব্যাপারটি ঠিক কি। এছাড়া বাংলা আর ইংরাজি বছরের মধ্যে অঙ্কের আঁত্মীয়তা ঠিক কি সমীকরণের মধ্যে দিয়ে উপস্থাপিত করা যায় সেটা জানতে পারে আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিশেষ উপকৃত হয়েছি। এটা যেন সেই সেন্টিগ্রেডের সঙ্গে ফারেনহাইট – এই দুই তাপমাত্রা মাপক এককের যোগসূত্র।
এই প্রসঙ্গে আমার খুবই সীমীত ধ্যানধারনায় একটি বিষয় উল্লেখ করছি। কোথায় যেন একসময়ে পড়েছিলাম যে লিপইয়ারের মাধ্যমে একটা দিন গোঁজামিল দিয়েও সময়ের হিসেবটাকে সঠিক করা যায় না। কয়েক মিলি সেকেন্ড নাকি ভাগশেষে থেকে যায়। সেই মিলিসেকেন্ড এক্ত্রে মিলিত হয়ে তিনশতাধিক বছর পর নাকি একটি পূর্ণ দিনে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তাই আমাদের পরিচিত এই ইংরেজি ক্যালেন্ডারে নাকি সেই তিনশ(+) [সঠিক সংখ্যাটি এখন ঠিক মনে পড়ছে না] বছর পর পর একটি করে পূর্ণ দিন যুক্ত হয়।
ঠিক না বেঠিক, সময় সুযোগ করে তা মাধবাবুর কাছ থেকেই জেনে নেব একদিন।

এবার আসা যাক দ্বিতীয় পর্যায়ে – “রোগ জীবানু এবং ওষুধ বিষয়ক প্রবন্ধ” সকলের আলোচনায়।

অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং অ্যান্টিবায়োটিক এই দুটি রাসায়নিক পদার্থের রোগ প্রতিষেধক এবং একই সঙ্গে রোগ প্রতিকারক কর্মকাণ্ড নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান একত্রে উল্লসিত এবং চিন্তিত। মাধববাবু স্বল্প পরিসরে এই দুই রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে Dr. Jakyll & Mr. Hyde চরিত্রের সন্ধান পেয়ে আমজনতাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যাতে তারা এই দুইয়ের যথেচ্ছ ব্যবহার থেকে বিরত থাকে।

কলেরা এবং বসন্ত এই দুটি মারন রোগ আমাদের দেশে বহু জীবনের অবসান ঘটিয়েছে স্বাধীনতা পূর্ব এবং পরবর্তী কালে। দুটি রচনার মাধ্যমে আমরা আলোকিত হলাম এই দুই রোগের অতীত এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। কি অসাধারন অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দিনের পর দিন রাতের পর রাত মানব কল্যাণে সময় ব্যয় করে এই দুই মারণ রোগ থেকে মানব জাতিকে স্বস্তি দিয়েছে। এই রাজসূয় মানব কল্যাণ কর্মকান্ডে দুই বাঙালী চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ শম্ভু নাথ দে এবং ডাঃ দিলীপ মহলানবিশ-এর অবদান আর একবার সর্বসাধারনের নজরে আনার জন্য মাধববাবুকে অশেষ ধন্যবাদ।

এই পর্যায়ের সবচেয়ে বিতর্কিত লেখাটি হল “হোমিওপ্যাথি”।
প্রায় এগার পাতা ব্যাপী (পৃ ৮২ – পৃ ৯২) এই দীর্ঘ রচনাটি হল বইটির দ্বিতীয় সর্ববৃহত রচনা। দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে একমাত্র বঙ্গাব্দ নিয়ে রচনাটিই সর্বাগ্রে অধিষ্টিত আছে। এই রচনাটি “অ্যালোপ্যাথি বনাম হোমিওপ্যাথি” নামক একটি চিরকালীন বিতর্কটিকে তার কবর থেকে উঠিয়ে এনেছে বলা যেতে পারে। এই বিষয়ে আমি কোন ব্যক্তিগত মতামত দিতে চাই না, তবে এই বিতর্কিত বিষয়ে একটি বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিকের “সম্পাদক সমীপেষু” বিভাগের কয়েকটি চিঠি আমার নজরে আসে। চিঠি’কটির মাধ্যমে পত্রপ্রেরকগন বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক পথিক গুহ মহাশয়ের একটি রচনার বিষয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন।
সেই চিঠিগুলোর কয়েকটি লাইন আমি এখানে শুধু তুলে ধরছি মাধববাবুর “হোমিওপ্যাথি” রচনাটির পরিপ্রেক্ষিতে।

৫/-
(৫)

প্রথম চিঠির লেখক শ্রী অশোক কুমার দাস, কলকাতা-১০ থেকে লিখেছেন,
“পথিক গুহ-র বক্তব্য, হোমিওপ্যাথি ঔষধে কোন ঔষধি থাকে না। তাই হোমিওপ্যাথি ঔষধের রোগ সারাবার কোন ক্ষমতা নেই ও এটি অবৈজ্ঞানিক। বক্তব্যের সপক্ষে লেখক উল্লেখ করেছেন ফরাসী গবেষক জাক বুভুনিস্তের মিথ্যে
দাবির কথা। উপেক্ষা করেছেন নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত লুক মতাঁনিয়ের নিজস্ব গবেষণা লব্ধ ফলাফল – দ্রব্যের লেশ না থাকলেও দ্রবণ কাজ করতে সক্ষম।“
দ্বিতীয় চিঠির লেখক শ্রী রতনলাল বসু কলকাতা-৫১ থেকে লিখেছেন,
“পথিক গুহ বলেছেন তাঁর ফতোয়ার ভিত্তি রুশ বিজ্ঞান আকাদেমির একটি ঘোষণা, যাতে বলা হয়েছে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকায় কোন হোমিওপ্যাথিক ওষুধে কী রোগ সারে লেখা যাবে না।
হোমিওপ্যাথি তত্ত্ব অনুসারেও কিন্তু সেটা লেখা যায় না, কারণ হোমিওপ্যাথিতে রোগভিত্তিক ওষুধ নেই সিম্পট্ম-এর ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচন করতে হয়।“
“সম্পাদক সমীপেষু” বিভাগের পাঁচটি চিঠিতেই বক্তব্য প্রায় একই – হোমিওপ্যাথিকে অচ্ছুত ভাববার কোনো কারন নেই। স্থানাভাবে সব চিঠিগুলোর থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকলাম।
আমার ব্যক্তিগত মতামত এখানে নিস্প্রয়োজন। তবে জনান্তিকে জানিয়ে রাখি যে আমি সপরিবারে পাচন প্রক্রিয়ার গণ্ডগোল অথবা ক্ষুধামান্দ্য অবস্থায় Nuxvom30-তে বিশ্বাসী। এই অবস্থায় যে সকল Allopathic OCD (Over the Counter Drug) আছে তাদের পারলে এড়িয়েই চলি। আর এটা কোন Placebo effect নয় বলেই আমার ধারনা।

এবার আসা যাক বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা গুলোর আলোচনায়।
এই সমস্ত রচনাগুলোয় খুব যত্ন সহকারে বিজ্ঞানের জয়ধ্বজা তুলে ধরা হয়েছে মানব কল্যাণের উন্নতি কল্পে। অবৈজ্ঞানিক কর্মকান্ড মানব জীবনে কি পরিমাণ ক্ষতি সাধন করতে পারে তার বেশ কিছু উদাহারণ আমরা এই পর্যায়ের সাতটি রচনার মাধ্যমে জানতে পারি। মারণ রোগ সম্পর্কে সাধারন মানুষের সততার সুযোগ নিয়ে কত অসাধু মানুষ যে তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করে চলেছে তার কিছুটা ধারণা আমরা করতে পারি এই পর্যায়ের রচনা গুলোর মধ্যে থেকে।
সংস্কার আর কুসংস্কার এই সুক্ষ প্রান্তরেখার এপার আর ওপারের ধ্যান-ধারণা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে বিজ্ঞানই যে মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে সেটা লেখক এই রচনাগুলোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন বহু উদাহরনের মাধ্যমে। লেখক নিজে বিজ্ঞানী আর তিনি নিখুঁত বিজ্ঞান চর্চায় বিশ্বাস করেন। আর করেন বলেই জ্ঞান আহরণ আর বিতরণে তাঁর কোন ফাঁকি নেই। জ্ঞানের অসামান্য আলোক আর সেই আলোকে আরও নতুন আলোর সন্ধান তাঁর নিরলস প্রচেষ্ঠা অতি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
এই পর্যায়ের রচনাগুলোতে অপর্যাপ্ত তথ্যের ভান্ডার আছে তবে অতিরিক্ত আবেগ নেই। এই বইয়ের পাতা ওল্টালে সাধারন পাঠক এমন একজন বিজ্ঞান মনস্ক ঋজু ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে যিনি সমাজের অবৈজ্ঞানিক মানসিকতার গোড়ায় গলদটির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে চলেছেন। মাধববাবুর এই রচনাগুলো পড়া থাকলে বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত ও অনালোকিত অন্ধকার জগতের প্রকৃতি ও তার ব্যবসা ভিত্তিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী বিজ্ঞান চর্চার গুরুত্ব বোঝার কাজটি সহজ হয় এবং অবশ্যই পাঠকের বিচার বুদ্ধিতে শান পড়ে।

তবে এই ধরনের বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনায় যে কথাটি বারবার উঠে আসে সেটা এই প্রসঙ্গে একটু আলোচনা না করে নিলে বোধহয় এই রিভিউটি আলুনি থেকে যেতে পারে ভেবে উল্লেখ করতে চাই। বিজ্ঞানের সর্বপ্রকার জয়যাত্রাকে কূর্নিশ জানিয়েও যে প্রশ্নটা সাধারন ম্যাঙ্গোম্যানদের মনে আসে সেটা হল যে মানব সভ্যতা যে খালি বৈজ্ঞানিক মুগুর ভাঁজার ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে এটা মোটেই আশা করা যায় না। বিজ্ঞান ব্যাখ্যা দিতে না পারলে সবটাই কি অবৈজ্ঞানিক? এই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু বিজ্ঞানীদের কাছে নেই।
যে হাইপথেসিসের ভিত্তিতে বিজ্ঞান পৃথিবীকে সর্ব প্রথমে সমতল এবং পরে গোলাকৃতি বলেছিল তা যদি চিরকালীন হিসেবে গণ্য হত তাহলে বিজ্ঞানেরই সমূহ ক্ষতি হয়ে যেত। শেষমেস বিজ্ঞানীরাই পৃথিবীকে নাসপাতি সদৃশ বলে মান্যতা দিয়েছেন।
বহু যুগ ধরে যে সকল ধ্যান ধারনা বিশ্বাস আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তাকে এক কথায় কুসংস্কার আর অবৈজ্ঞানিক বলে দেগে দিলে কিন্তু বিজ্ঞানই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেই আমার ধারনা।

৬/-

(৬)

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে ভারতবর্ষের জ্যোতিষ শাস্ত্রে প্রথম থেকেই কিন্তু অর্ধাকৃতি গ্রহের উল্লেখ আছে। পশ্চিমী অ্যাস্ট্রোনমি কিন্তু সেই বিষয়ে ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্রকে চিরকাল হীন দৃষ্টিতেই দেখে এসে আজ তারা স্বীকার করে নিয়েছে যে তাদের আবিস্কৃত Pluto গ্রহটি আসলে একটি হাফ প্ল্যানেট।
এই প্রকার আমাদের বহু সামাজিক সংস্কার যা আজকের বিচারে কুসংস্কার বলে মনে হয় তা যদি সেই সময়ের সামাজিক এবং বৈজ্ঞানিক অবস্থানের বিচারে বিচার করা যায় তবেই তার আসল মূল্যায়ন সম্ভব বলেই আমার ব্যক্তিগত মতামত।

বিজ্ঞান সতত সচল। আজ যেটা কল্পনা, কাল সেটা বাস্তব। বৈজ্ঞানিক আর অবৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণা নিয়ে স্বাস্থ্যকর বিতর্ক চলুক। তবে সেই বিতর্কে চাই সকল বিজ্ঞান মনস্ক মানুষের সহযোগিতা। আজ যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানের কাছে নেই কাল যে তার সত্য উদ্ঘাটিত হবে না তার কোন কারন নেই। আর সেই অনাবিস্কৃত দিন পর্যন্ত তা সকল যে অবৈজ্ঞানিক – এই একমুখি চিন্তা ধারাই বিজ্ঞানকে যাতে One eyed deer-এ পরিণত করতে না পারে তার দায়িত্ব কিন্তু মাধব চট্টোপাধ্যায়ের মত মননশীল বিজ্ঞান মনস্ক মানুষদের ওপরেই ন্যস্ত থাকবে।

Fish Masala

Bratati Majumdar

Ingredients:

Fish (Rohu or Bhetki) – 500 gm

Curd – ½ cup

Sugar – 3 teaspoon

Salt – 1 teaspoon

Chili Powder – 1 teaspoon

Ginger Paste – ½ teaspoon

Garlic Paste – 1 pinch

Onion Paste – 1 tablespoon

Turmeric Powder – ½ teaspoon

Garam Masala Powder – ½ teaspoon

Coriander Paste / Powder – 1 teaspoon

Oil – 2 table spoon (microwave) or 50 gm for shallow fry

Chopped Tomato – 1

Chopped Carrot and Capsicum – 1 each

Method:

Marinate the fish with all the spices except garam masala. Keep it marinated for 1 hour. Sprinkle garam masala and 1 tablespoon oil. Cook in the microwave oven for eight minutes. Make sure that both the sides are evenly cooked.

Alternatively, if cooking on stove top, then heat the oil, put the fish, sprinkle garam masala and cover it. Keep cooking on medium heat. Garnish with chopped carrot, capsicum and tomato.

Image: Bratati Majumdar

Soundscape

Sudarshana Dhar

The hills are alive with the sound of music

With songs they have sung for a thousand years

The hills fill my heart with the sound of music

My heart wants to sing every song it hears…

The Sound of Music (1965)

Music, like any other art form, is often defined by an individual’s experience. Yet, what construes as music? The immediate thought that comes to my mind is that music can be anything that is pleasant to hear.

It might be interesting to trace how the mind fathoms music. Is it simply a gathering of notes? Or how the words are arranged corresponding to the notes? Is it the poetry in the song? Is it the supporting music? Is it the twang of the string or the rolling of the tabla? Is it the tonal quality of the vocalist or the beat that leads one to tap the foot?

Again, if we choose to broaden our definition – is it a capsule of one’s memories? Perhaps, a lullaby that the mother sang? The croaking voice of your grandpa chanting a shloka? The off-key yet full throated voice of the oarsman? Or the chirping of the birds in the early morning? The first babble of your child? Or even the first time the mother hears the new born baby cry?

But then, what’s music to one might be noise to another.

The recorded version of Suprabhatam by MS Subbulakshmi is played across the southern part of India at the wee hours in almost every Hindu household. Do you really think that the music that the natives of Deccan Plateau regard as ‘divine’ would hold the same value to a denizen of a different country or continent? To someone from Meghalaya or Manipur?

On a similar note do you think that the radio programme Mahishasuramardini that is broadcast on the day of Mahalaya every year at 4 am and enjoys immense popularity among Bengali community, would be equally appreciated by Indians from other regions too? Is it not then a beautiful manifestation of memoried(!) music that the typical Bengali eagerly awaits the whole year and doesn’t mind waking up in the dark to turn on the radio and catch up on the repeat broadcast that is being replayed for ages?

So music that one appreciates is not just a gathering of notes, instead it evokes a unique context of cultural connotation to the listener. For a child, the first form of association with music comes with unique experiences and memories. These are often sounds from different sources. But these become a part of the soundscape that the child grows up in and later forms the music that is associated with those experiences or memories.

What was that my father sang when he propped me up on his shoulders and went around the house? The radio that played the first notes of shehnai in the morning; the tinkling of my mother’s bangles that I could hear from a distance; the wind that howled by my house on the hilltop; the chirping of the birds, the sound of the river, the melody of the wind, the rustling of the leaves – these are different forms of music that a child grows up with. This is the music that the child doesn’t hunt for. It is merely part of the child’s environment which resonates in the subconscious, the way Maria could hear the hills sing in the film The Sound of Music.

My granny was off-key to an alarming extent. But as much as she loved listening to me singing to her, I loved to hear her sing the 108 names of Krishna, set to a tune I could never fathom, given her non-existent musical skills. This music carried no perfect swaras but it had loads of warmth and affection. It was music, to my ears, undeniably.

Then came my appreciation for the organized perfected art of music. This came only after I underwent enough training to understand and appreciate a performance. This form is much more organized even in its moment of supreme creativity or utter chaos. It is still defined in terms of set frequencies, defined pace and rhythm; swaras arranged neatly and rhythm and words set to some level of expectation.

There are categories of music that are broadly defined according to a region’s legacy of Classical music. The format is well-set and the voice throw is formalized. The instruments used are defined to the finest detail of fibre or metal used. The form, content and expression just get more and more refined with every year of its existence. It is not expected from the man on the street to walk into a concert of Classical music and figure out what the performance is all about. There has to be some initiation and training to appreciate this defined form of music.

Defined music can also be in a lighter form where one does not need training to appreciate a performance. This kind of music has an easy form of sound arrangement with or without poetry. This lighter form is often found in music albums and music used to support the storyline of films. In this form of music, the soundtrack or playback forms an integral part of the experience, yet it is never the primary focus. But since, films have a wider reach with its power of storytelling, the accompanying music travels far and wide and reaches remotest parts of a country with ease. At least, this is how Bollywood-esque music travels far and wide.

While traveling to some remote parts of India, I have heard cassettes and CDs being played in the cars and buses. Surprisingly, these were not local songs but Bollywood songs, that were released at least two decades back. That set me thinking whether they find it comforting to listen to known songs repeatedly.

There is a third form of music which is folk.These songs are spontaneous and heartfelt that speak of joys and pains of a particular community and its surrounding geography. This music reflects the air, water, rain, trees, birds, flowers of a particular region. Folk music has the rhythm of the task that the local community is engaged in. For example, the tea garden workers sing the music of plucking the tea leaves, which has the rhythm of the task too. The oarsman sings his song in the tune of his daily chore of pulling the oar, the menial labourers sing the songs that are set to the pace of their chores too. The beat is engaging, the tune is hummable and one gets to hear highly philosophical statements springing from harsh truths of real life. The songs can bring tears to one’s eyes and then a cheer to celebrate the magic of life with a smile and move on.

The best part of the folk form is its easy appeal even to the uninitiated. Though the music is a reflection of the geography and its people, it never fails to attract people outside its geographical limit. One can easily find foot tapping cheerful folk music that can enliven the spirit within. Some songs also carry the angst of the deprived or downtrodden and one can still feel the same even if the language is alien.

And then there are poet composers like Tagore and Thyagaraja who have left behind a rich legacy of poetry and music adding as an entire genre to be explored. In Tagore’s collection, there are songs that can find a place in the well-defined form and yet there are umpteen compositions that have been adapted from the folk tradition. Tagore had the privilege to be born in times when he could to be widely documented and published such that the tradition lived on. He created a wide repertoire which included music that appealed to the musical mind of both the initiated and the uninitiated.

Here, I offer my apology to the readers who know more poet composers like Tagore and Thyagaraja and feel that I haven’t been adequately exposed to talents existing worldwide. My limited reading led me to these two talents and I would like to hear about anyone else who gave the musical world a collection so large and such rich.

I have an interesting observation to share with my readers. I have a group of friends who are musically inclined. We share music whenever we come across something new and interesting. I have noticed that a new song or piece of music holds different points of attraction/observation to different friends. The first play has different things to offer to different pairs of ears. One is attracted to the lyrics, the other to the composition of notes, the other listens to the background/support music, yet another listens to the tonal quality and expertise of vocal skills. With the second hearing, gradually, the mind opens up to hear and look at the other points of attraction.

Whether we agree or not, music undeniably, is experienced in varied ways. We do need some amount of orientation to even sit for a while and pay some fleeting attention to music that we experience.

Yet, it remains the best messenger of feelings across time and space. The pathos, the angst, the joy, the ecstasy of human beings travel across geographies and communities the best in the form of music. It has the potential to charm the stranger, lure the unknown, calm the troubled soul and speak galore when every other form of communication seems inadequate.

My Days With Ruskin Bond

Protiksha Ukil

The long awaited month of June was supposed to be much more than a summer vacation for me; it was meant to provide a break from the two-year-long series of weekly exams that had jeopardized my generally carefree lifestyle. By first week of June when the long string of unending exams finally came to an end, I was at the bottom of my energy levels.

The upcoming good time was ushered in by some quality movie time with the documentary, “Sachin: A Billion Dreams”. It rejuvenated my exhausted mind and set me up for the tour to Uttarakhand, the next day.

We landed in Delhi and it felt like entering in a blast furnace. Hyderabad is usually very hot too but the Delhi heat seemed to be a different beast. As we waited long for the cab to arrive through the swirling traffic, drops of sweat appeared on the brow but in no time vaporized in the warm, polluted air around us. In a short while we were riding along the wide roads of Connaught Place. The white, colonial buildings, flashy shops of ritzy brands, opulent restaurants – all contributed to the rising feeling of awe in me. Soon, I noticed a very distinct transition in the surroundings. The roads became narrower and crowded, the walls of the buildings along the road were hardly visible. The flashing hoardings and and posters crowding in gave rise to a claustrophobic feeling! Pahargunj was an eye-opener with its erratic traffic and the diversity of people – hippies, Koreans, stall owners, cobblers, beggars and even stray dogs and the overall congestion was overwhelming. The two localities were adjacent yet so contradictory in appearance and brought home the unique metropolitan character of Delhi; one was classy while the other so narrow that it was barely walk-able.

In the evening we travelled to Rohila Sarai, again a locality with completely different character. We boarded a train, scheduled to reach Dehradun next morning. We were accompanied by my uncle, aunt and my two lovely cousins who were very disappointed to find their favourite Ena didi so drained out. The train reached Dehradun about an hour and a half late, reminding us about the delays which have become the hallmark of Indian Railways. I had expected Dehradun to be a very comfortable and pleasant place; surprisingly the weather was quite stifling. Though the Sun God was not very furious the heat was suffocating. We rented a car for five days and started off for Dhanoulti, a hamlet in the lap of mountains.

I hate travelling by car, especially if it includes mountain trails and an abundance of hair pin bends. In addition, our driver’s amazingly rash driving skills made me feel giddy and nauseated. The world around me spun and my tummy churned and tried to get rid of its contents. A three- hour-long drive seemed like a lifetime when you have such a phobia for hilly roads. Our destination, a secluded resort tucked away in the mist, was a welcoming sight. The interplay of clouds and sunshine could dissolve any trace of uneasiness in the mist. Three bright cottages with red, sloping roofs welcomed us with warm refreshments. The dark green conifers encapsulating the surrounding hills gradually faded into the advancing veil of dusk. This was indeed refreshing for all of us.

Mornings in a city are filled with a lot of cacophony, noises emanating from the kitchen utensils, honking of cars, shouting of street vendors; all these drown the chirping of the very few birds that exist there. Dhanoulti offered a different view of dawn – dew drops glittering like diamonds, crowning

the emerald coloured grass blades, the thick and thin fog playing hide and seek over the terrace farming plots along the hillside, a brief sunshine interrupted by a gentle drizzle which in no time turned into a brief downpour, the loud pitter-patter of raindrops on the tin roof, and the chirping of numerous birds generated a symphony which can be compared to none. Gradually, the rain stopped and the morning sun peeped out with a subtle brilliance that brought warmth to my soul. My heart hummed “ Sunshine on my shoulders makes me happy, sunshine in my eyes can make me cry, sunshine on the the water looks so lovely, sunshine almost always makes me high…….” A wonderful song for a wonderful place!

After a filling and delicious breakfast, we started to visit nearby places like the Eco Park, Kaanataal, Sarkunda Devi Temple. The temple tour included a 2.5 km long trek, through steep steps. I could not gather the courage to climb the steps, so I stayed back to enjoy the landscape below with my exuberant sisters. There was a hilly spot right where the steps to Sarkunda Devi Temple started. There were sheep grazing with a couple of sheep dogs and a shepherd keeping guard. The fresh air, the tall trees and the land under step cultivation stretching down the hillside, brought an imagery alive to me. It reminded me of the lines, “Heidi, was it this blissful sight that you witnessed everyday? Is it for these lovely sceneries that you longed to return to your very own Swiss hills and your very dear Peter?”

Next day we came down to Benog Pines Cottage which was locked away amidst the thick woods in Rajaji National park. This National Park spans over a very large area between Haridwar, Rishikesh, Dehradun and Mussoorie. We entered the park from the Mussoorie side. The road to our cottage was very bumpy, more of a narrow trail through thick vegetation. The last 750 metres had to be covered on foot since the road turned out to be unfot for the car. A few trickling streams traversed this pebble strewn path through the forest. Leeches were in abundance in these little streams which frightened my little sisters very much. The experience of a leech sucking at my toe was a new one for me. I literally didn’t feel anything! On our arrival we heard that a leopard had strayed into the small clearing in front of our cottage just two days back!! This piece of information was thrilling but at the same time scary, particularly to my cousins. Afternoon faded into evening, and the dense thickets were filled with various sounds; crickets chirping, parakeets screeching, koel’s cooing and a medley of other unique sounds. As dusk approached an uneasy feeling gripped my sisters and me – was the leopard watching us from somewhere within the bushes?

The following day, we visited the Kempty Falls which was close to Benog. We started with a clear sky but by the time we reached Kempty there was a very heavy downpour along with sleet. The surroundings and the road were barely visible. We grabbed this opportunity to enjoy hot and delicious food at a roadside dhaba with an amazing view of the Kempty Falls below. The steam from the mouth watering paneer bhurji, the mist from the rain and sleet mingled and created a beautiful ambience for us. We returned to our cottage in the woods with an unforgettable experience in mind.

On the penultimate day of our trip we visited Mussoorie, a town of which my mind had a vivid imagery from the numerous books of Ruskin Bond. His descriptions had painted a very serene picture of the Mussoorie town in my mind. However, Mussoorie turned out to be one bustling with tourists, shops, and hotels. Though very congested it had an altogether different vibe. My excitement reached its peak when my uncle informed me about my favourite author’s Saturday visits to “The Cambridge Book Depot” located on the Mall Road of Mussoorie. Incidentally, it was a Saturday! We walked down the road and entered a fancy restaurant called “ Tavern”. Don’t judge a book by its cover, appearances are often deceptive! So are reviews available over internet. The service was quite poor and the food was not impressive either. Anyway, there was a lot of happiness awaiting us after this disappointment. It was time to visit Ruskin Bond. We stood in the queue that had formed outside the bookstore, eagerly waiting for our turn to interact with my favourite literary icon. Meanwhile, I noticed the crowd that had gathered. There were people who had not read even a single book written by the blue-eyed author, yet they had gathered there to take selfies along with him. When my turn arrived at last, my heart kept pounding. Despite his advancing age he was as young at heart as ever. He was wearing a bright yellow sweater which complimented his rosy cheeks and greyish blue eyes. His English accent still rings in my ears!

Sir, I am a huge fan”, I murmured. He smiled gently and took the book into his hands and autographed it. I had bought The Room on the Roof, his very first book that he had written at the tender age of seventeen and which brought to him the prestigious John Llewellyn Rhys Memorial Prize in 1957.

My hands were trembling while I put forth my question timidly. “ What are your upcoming novels, sir?” He answered that his recent novels included his autobiography- Lone Fox Dancing and another book titled Looking for the Rainbow. The latter revolved around the very few days that he had spent with his dad. I purchased these books immediately. My interaction with this very special person will remain an everlasting memory.

Carrying the newly-purchased books close to my heart, we walked down to Keventers to get some milkshakes, If any of you ever come across this franchise, do try out Caramello – you will love it! The day was coming to an end and so was our trip. We shopped a little which is an unavoidable tendency of tourists. At dusk we took a few photographs at “library chowk” which brought our day to Mussoorie.

The usual giddiness and nausea accompanied me on the return journey. Dehradun Zoo could have been a refreshing change. But the sparsity of animals disappointed us. There were a few birds, two leopards and two crocodiles. With the ambience of Benog sanctuary fresh in mind I recollected the famous Bengali saying, “Banyera bone sundor” meaning that wild animals look best in forests. In a day’s time we were back to Hyderabad, back to routine, back to life as we live it!

Illustration by Soma Ukil